“এটা হিন্দুস্তান, হিন্দুরা যা চায় তাই হবে”-মাংস বিক্রির প্রতিবাদে কেএফসি ফুডস ঘেরাও হিন্দু সংগঠনের

উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বসুন্ধরা এলাকায় শ্রাবণ মাস ও কানওয়ার যাত্রার অজুহাতে রেস্তোরাঁ চেইন কেএফসি এবং নাজির ফুডসের আউটলেট জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে হিন্দু রক্ষা দল। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এই ঘটনা ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত ব্যবসার উপর হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে শ্রাবণ মাস ও কানওয়ার যাত্রা চললেও, ওই অঞ্চলে সরকারিভাবে মাংস বিক্রির উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তা সত্ত্বেও, হিন্দু রক্ষা দলের সদস্যরা হঠাৎ করেই এই দুটি দোকানে প্রবেশ করে কর্মীদের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা জোরপূর্বক দোকানের শাটার নামিয়ে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

ঘটনার ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতিবাদকারীরা “ভারত মাতা কি জয়” এবং “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিচ্ছে। তারা দোকানকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলছে, “এটা হিন্দুস্তান, এখানে হিন্দুরা যা চায় তাই হবে।” তাদের এই উক্তি স্পষ্টতই ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে একটি চরমপন্থী মনোভাবের প্রতিফলন।

হিন্দু রক্ষা দলের একজন নেতা এই প্রতিবাদকে সমর্থন করে বলেন, “আমরা এখানে কেএফসি ও নাজির ফুডসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি কারণ এটি একটি হিন্দু-প্রধান এলাকা। এখানে কানওয়ার যাত্রা হয় আর তারা মাংস বিক্রি করছে। হিন্দুদের আবেগকে সম্মান না জানিয়ে যদি এমন কাজ করে, আমরা প্রতিবাদ জানাবো।” তিনি আরও দাবি করেন যে, তারা এই পদক্ষেপের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে “মৌখিক অনুমতি” পেয়েছেন। যদিও লিখিত কোনো অনুমতি নেই, তবে যেহেতু তারা এলাকায় “সক্রিয়”, তাই কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের “নিয়মিত কথা হয়” এবং সেই সূত্রেই “মৌখিকভাবে অনুমতি পেয়েছি।” এই দাবি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আরেকজন প্রতিবাদকারী বলেন, “এই দোকানগুলো বন্ধ রাখতেই হবে। যদি কেএফসি বা নাজির ফুডস আবার খোলা হয়, আমরা আবার একইভাবে প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করবো।” তাদের এই বক্তব্য ভবিষ্যতের আরও হামলার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ জুন থেকে শুরু হয়েছে কানওয়ার যাত্রা, যেখানে লক্ষ লক্ষ শিবভক্ত হরিদ্বার থেকে পদযাত্রা করে তাঁদের স্থানীয় শিবমন্দিরে গঙ্গাজল নিবেদন করেন। এই ধর্মীয় যাত্রার সুযোগ নিয়ে কিছু গোষ্ঠী আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, যা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পুলিশ প্রশাসনের নীরবতা এই ধরনের ঘটনাকে আরও উৎসাহিত করছে কিনা, সেই প্রশ্ন এখন তীব্রভাবে উঠছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy