এক শিক্ষক বনাম ৫৫ জন পড়ুয়া! মধ্যপ্রদেশের স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ড ভাগ করে চলছে জীবনযুদ্ধ

মধ্যপ্রদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারাটা এবার ধরা পড়ল ক্লাসরুমের ভেতরেই। আগর মালওয়া জেলার খেড়া মাধোপুর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটি যেন এক জীবন্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৫৫ জন পড়ুয়াকে সামলাচ্ছেন মাত্র একজন শিক্ষক! হিন্দি, ইংরেজি, অঙ্ক থেকে শুরু করে বিজ্ঞান—সব বিষয়ের ভার এখন শিক্ষক ভরতকুমার জাতবের কাঁধে। কারণ, স্কুলের অন্য শিক্ষককে গত নভেম্বর থেকে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) সংক্রান্ত সরকারি কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্কুলটির পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, একটি ব্ল্যাকবোর্ডকে দু’ভাগে ভাগ করে একদিকে চতুর্থ এবং অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ দেওয়া হচ্ছে। পাশের ঘরে একটি বোর্ডকে তিন ভাগে ভাগ করে চলছে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষক ভরতকুমার জাতবের অসহায় স্বীকারোক্তি, “আগে আমি নিচু ক্লাস দেখতাম, অন্যজন উঁচু ক্লাস। এখন একা ৫টা ক্লাস দেখা কার্যত অসম্ভব। বাচ্চাদের কাজ দিয়ে অন্য ঘরে গেলেই ওরা হইচই শুরু করে।” পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাজের গলাতেও ঝরে পড়ল হতাশা, “স্যার অন্য ঘরে গেলেই আমরা সব গুলিয়ে ফেলি।”

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমগ্র মধ্যপ্রদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষককে বুথ লেভেল অফিসার (BLO) ও SIR-এর কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে রাজ্যের কয়েক হাজার ‘এক-শিক্ষক’ স্কুল এখন কার্যত শিক্ষকশূন্য। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের ৯২ হাজারেরও বেশি স্কুলের মধ্যে ২২ শতাংশ শিক্ষকই এখন ভোটের কাজে ব্যস্ত। অথচ গত চার বছরে শিক্ষা বাজেট ২৫ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার কোটিতে পৌঁছালেও রাজ্যে সাক্ষরতার হার কমছে। রাজ্যে এখনও প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য।

কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটওয়ারির অভিযোগ, শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। অন্যদিকে শিক্ষক সংগঠনের দাবি, কাজের চাপে গত দু’মাসে একাধিক শিক্ষকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী উদয়প্রতাপ সিং ৩২ হাজার নতুন নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভোটার তালিকার কাজ শেষ করে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন ২০২৬-এর ৭ ফেব্রুয়ারি—যেদিন থেকে শুরু হবে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা। ততদিনে পড়ুয়াদের সিলেবাসের দফারফা হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy