এক রাতের বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত পাহাড়ের ‘রানি’! কোটির উপরে ক্ষতি দার্জিলিংয়ের কমলা বাগানে, শীতে বাংলার বাজারে ফল মিলবে কি?

দার্জিলিং চায়ের মতো এই শৈলরানির কমলালেবুর স্বাদও বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু সম্প্রতি একরাতের ভারী বৃষ্টি ও ভয়াবহ ধসে পাহাড়ের এই অর্থকরী ফসলটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মরশুমের শুরুতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছোবলে বিধ্বস্ত হয়েছে পাহাড়ের ‘রানি’ কমলা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বিপর্যয়ের প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমির কমলা বাগান ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটির উপরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ধ্বংসলীলা মিরিকে
দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে কমলার চাষ হলেও, মিরিক অঞ্চলের ‘কমলা সিটি’ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। বিপর্যয়ের প্রভাবও সেখানে ছিল সবচেয়ে বেশি।

ক্ষতির চিত্র: কোথাও গাছ ভর্তি কমলালেবুর বাগান পাহাড়ের খাদে তলিয়ে গিয়েছে। আবার কোথাও ধসের ধাক্কায় তছনছ হয়ে বেশিরভাগ গাছ মাটিতে পড়ে গিয়েছে বা ধসে চাপা পড়েছে।

চাষিদের হতাশা: মাত্র আর একমাস বাদেই কমলার ফলন ওঠার কথা ছিল। ফলন তোলার ঠিক আগে এমন বিপর্যয় আসায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। চাষি নিশা তামাং এবং রামরতন তামাং-এর মতো অনেকেই বলছেন, “সারা বছর এই ফলনের জন্য খেটেছি। কাঁচা ফলশুদ্ধ গাছগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটি গাছও বাঁচেনি। সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা: মিরিকের বাইরে কার্শিয়াং, পুলবাজার, সুখিয়াপোখরি, রংলিরংলিয়ট-সহ মংপু, সৌরেনি, দাড়াগাঁও, দেউরালি, পোখরিয়াবং ও মেরিবং-এও কমলার বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজ্যের উদ্যোগ এবং বিকল্পের পরামর্শ
ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের কারণে শীতে বাংলার বাজারে দার্জিলিংয়ের কমলার দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে সমতলের বাসিন্দা ও ফল ব্যবসায়ীরাও হতাশ এবং এর প্রভাব পড়বে পাহাড়ের অর্থনীতিতেও।

জিটিএ: জিটিএ’র ভূমি ও কৃষি বিভাগের সদস্য সতীশরাজ পোখলের বলেন, “কমলার ফলন কমবে বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকরা তৈরি করছেন। আমরা কৃষকদের পাশে আছি।”

কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর: দার্জিলিং জেলা উদ্যানপালন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রভাস মণ্ডল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে এবং শীঘ্রই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে।

ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ: দার্জিলিং জেলার অতিরিক্ত কৃষি অধিকর্তা পার্থ রায় জানান, ক্ষতি কমাতে চাষিদের বিকল্পভাবে সবজি ও ভুট্টা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য কৃষি ও উদ্যানপালন বিভাগ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সবরকম সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর পাহাড়ে প্রায় ৫২ মেট্রিক টন কমলালেবু উৎপাদিত হলেও, গত দু’দশকে তা কমে ২৯ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছিল। এই বিপর্যয়ের কারণে এবারের উৎপাদন আরও মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy