এক বছর পরেও বিচার অধরা, RG Kar-কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ শাহের দরবারে নির্যাতিতার মা-বাবা

নৃশংস আরজিকর কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যার বিভীষিকাময় ঘটনার এক বছর পূর্তি ঘনিয়ে আসছে। ৯ আগস্ট সেই মর্মান্তিক দিনটি পেরিয়ে যাবে, যখন এক তরুণী চিকিৎসকের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, যা সারা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। এক বছর পরও বিচারের আলো দেখতে পায়নি নির্যাতিতার পরিবার, তাই সুবিচারের দাবিতে তাঁরা নতুন করে আন্দোলনের পথে নেমেছেন। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে তাঁরা একদিকে যেমন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন, তেমনই অন্যদিকে নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

দিল্লিতে শাহ-সাক্ষাৎ, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা:
আজ, বৃহস্পতিবার, নির্যাতিতার বাবা-মা দিল্লি যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের মূল লক্ষ্য হল, এই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রওনা দেওয়ার আগে তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিবিআই তদন্তের গতি অত্যন্ত ধীর। এক বছর পার হলেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে তাঁরা সিবিআই এবং সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন। নির্যাতিতার মা বলেন, “আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব এবং মেয়ের বিচারের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।”

নবান্ন অভিযান: বিতর্ক ও সংঘাত:
৯ আগস্ট নির্যাতিতার বাবা-মা নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। এই কর্মসূচিতে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সমর্থন জানিয়েছেন। তবে এই অভিযান নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে এই অভিযান বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে এটি জনজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করবে। এই অভিযোগের জবাবে নির্যাতিতার বাবা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, “২১ জুলাই তৃণমূলের সভাতেও তো জনজীবন ব্যাহত হয়। তাহলে কি আমার মেয়েটা বিচার পাক, এটা এরা চায় না?”

জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান:
এই নবান্ন অভিযান নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ জানিয়েছে, তাঁরা এই অভিযানে অংশ নেবেন না। তাঁদের বক্তব্য, যেহেতু এই অভিযানের ডাক রাজনৈতিক নেতা দিয়েছেন, তাই তাঁরা এই ধরনের কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান। তাঁরা বলেন, “আমরা বরাবর রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিজেদের দূরে রেখেছি। যদি নির্যাতিতার বাবা-মা নিজে এই ডাক দিতেন, তাহলে আমরা হয়তো যোগ দিতাম।” জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের নিজস্ব প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে ৮ আগস্ট একটি মশাল মিছিলের আয়োজন করেছেন, যা রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলবে।

এক বছর পরও ন্যায়বিচারের দাবিতে পরিবার ও চিকিৎসকদের এই লড়াই প্রমাণ করে, এই ঘটনায় এখনো ক্ষোভ এবং যন্ত্রণা কতটা গভীর। দিল্লি ও নবান্নকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন কী মোড় নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে রাজ্যবাসী।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy