সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের অসহযোগিতা এবং মানবিকতার চরম অভাবের জেরে আবারও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। একটি ট্রলির অভাবে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের গেটেই নিজের গাড়িতে মৃত্যু হল গৌতমকুমার সরকার (৫০) নামে এক প্রৌঢ়ের।
এই ঘটনায় হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং এক শ্রেণির কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও ঔদ্ধত্যের পুরনো অভিযোগগুলি নতুন করে সামনে চলে এল।
৩০ মিনিট ধরে ছটফট, মেলেনি সহায়তা
উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানার বানবোল গ্রামের বাসিন্দা গৌতমকুমার সরকারকে অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগের সামনে গাড়ি থামার পরই শুরু হয় বিভীষিকাময় অধ্যায়।
কাকুতি-মিনতি: পরিবারের লোকজন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলির খোঁজ চালাতে থাকেন। কিন্তু, কোথাও ট্রলি পাওয়া যায়নি। এরপর তাঁরা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের কাছে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে একটি ট্রলির জন্য কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন।
অমানবিকতা: অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীরা টাকার দাবি না মেটায় মুমূর্ষু রোগীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। মানবিকতা দেখানোর বদলে তাঁরা সম্পূর্ণ অসহযোগিতা করেন।
গাড়িতেই মৃত্যু: দীর্ঘক্ষণ গাড়িতেই পড়ে থেকে বিনা চিকিৎসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গৌতম সরকার।
সময়মতো ট্রলি পেলে হয়তো চিকিৎসকরা তাঁদের কাজ শুরু করার সুযোগ পেতেন, এই আফসোসই এখন পরিবারকে তাড়া করছে।
বারবার অভিযোগ, তবুও অমানবিক কর্মীরা
সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মীর দৌরাত্ম্যের অভিযোগ রায়গঞ্জ মেডিক্যালে নতুন নয়। ট্রলি, হুইল চেয়ার কিংবা বেড পরিষ্কারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগ বারবার উঠেছে। টাকা না-পেলে তাঁরা রোগীদের প্রতি চরম অসহযোগিতা করে বলে অভিযোগ।
যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের পরিবারের তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তবুও এটি জেলার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল ছবিটা আরও একবার বেআব্রু করে দিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
রায়গঞ্জ মেডিক্যালের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।