কেরালার কোথামানগালম এলাকার এমএ কলেজে এখন এক বিরল অথচ অনুপ্রেরণামূলক দৃশ্য নিয়মিত দেখা যায়। প্রায় ৪০ বছর বয়সী পূর্ণিমা, তার ১৭ বছর বয়সী ছেলে বৈষ্ণবের সঙ্গেই কলেজে আসেন, ক্লাস করেন এবং একসঙ্গে বাড়ি ফেরেন। কলেজের আঙিনায় তারা শুধু মা-ছেলে নন, তারা সহপাঠী। এই ব্যতিক্রমী ঘটনা এখন সকলের নজর কেড়েছে এবং খবরের শিরোনামেও জায়গা করে নিয়েছে।
বৈষ্ণব বিকম প্রথম বর্ষের ছাত্র, আর তার মা পূর্ণিমা প্রথম বর্ষের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। তাদের বিষয় আলাদা হলেও, ভাষার ক্লাসগুলিতে তারা একসঙ্গেই বসেন, নোটস নেন, পড়া ধরলে উত্তর দেন এবং এমনকি হোমওয়ার্কও করেন। এই দৃশ্য এখন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত হলেও, বাইরে থেকে আসা যে কারো জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং কৌতূহল উদ্দীপক।
লজ্জা নয়, গর্বের বিষয়:
মা কলেজে তার সহপাঠী, এটা নিয়ে বৈষ্ণব কি কখনো বিব্রত বোধ করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বৈষ্ণব স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তার এ নিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জা বা সংকোচ নেই। বরং, মায়ের শিক্ষার প্রতি এই আগ্রহ এবং তার সঙ্গে একই কলেজে পড়তে পারাটা তার কাছে গর্বের বিষয়। কলেজ শেষ হলে মা ও ছেলে একসঙ্গেই স্কুটারে চেপে বাড়ি ফেরেন।
স্বপ্নপূরণের অদম্য ইচ্ছা:
পূর্ণিমা জানান, ছোটবেলায় নানা কারণে তার পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় এবং দুই সন্তানের মা হন তিনি। তবে তার স্বামী তাকে সবসময় স্নাতক হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। স্বামীর এই অনুপ্রেরণা এবং নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে পূর্ণিমা সুযোগ পেয়েই ছেলের সঙ্গে একই কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এখন তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত।
পূর্ণিমা ও বৈষ্ণবের এই গল্প প্রমাণ করে যে, বয়স বা পরিস্থিতি কোনো স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে পারে না। শিক্ষার প্রতি তাদের এই অঙ্গীকার এবং মা-ছেলের এই যৌথ শিক্ষাযাত্রা অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে, যা শিক্ষার গুরুত্ব এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।