দুর্গাপূজার আনন্দ শেষ হতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন কর্মযজ্ঞ। উৎসবের মরশুমকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষ এবং রুষ্ট কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করতে এবার ‘বিজয়া সন্মিলনী’কে জনসংযোগের প্রধান মঞ্চ করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের লক্ষ্য স্পষ্ট— আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ভিত আরও মজবুত করা এবং মানুষের আস্থা অর্জন করা।
বিজয়া সম্মিলনীই মূল প্রচারের সেতু
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, বিজয়া সম্মিলনীকে শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান হিসেবে দেখলে চলবে না। বরং প্রতিটি কর্মসূচিই হয়ে উঠবে প্রত্যক্ষ জনসংযোগের মঞ্চ।
লক্ষ্য: দলীয় কর্মীদের কাছে টেনে নেওয়া, ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন এবং পুরনো নেতা-কর্মীদের ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা।
আয়োজন: দলের নির্দেশে ব্লক থেকে শুরু করে সাংগঠনিক জেলার প্রতিটি স্তরে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। অক্টোবর মাস জুড়েই এই ধরনের অনুষ্ঠানের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
বিশিষ্টদের সম্মান ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
এই অনুষ্ঠানগুলির প্রাথমিক উদ্যোগ নেবেন স্থানীয় বিধায়ক, ব্লক সভাপতি বা গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং এলাকার প্রবীণ সমাজকর্মীরা। তাঁদের ফুল-মালা দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হবে।
মিষ্টিমুখ ও সৌহার্দ্যের বার্তার পাশাপাশি প্রতিটি সভা থেকেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
ভোটার তালিকায় সঠিক নামের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সচেতনতা তৈরি।
এসআইআর (SIR)-এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা।
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “এগুলো কেবল সামাজিক সৌজন্যের অনুষ্ঠান নয়, বরং মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার প্রয়াস। কোথাও অভিমান থাকলে সেটি কাটানোর চেষ্টা।”
‘অভিমানী’দের ফেরানোর সুযোগ
রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত পুরনো কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকে অন্য দলে যোগ না দিলেও সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন।
শাসক শিবির মনে করছে, এই বিজয়া সম্মিলনী সেই ‘অভিমানী’দের ফের দলীয় আঙিনায় ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করবে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম, পঞ্চায়েত এলাকা এবং পুরসভার ওয়ার্ড স্তর পর্যন্ত এই কর্মসূচি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে যাঁরা নীরবে দীর্ঘদিন কাজ করে এসেছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে দলের ভিত মজবুত করা যাবে।