ভারতে বন্য হাতির সংখ্যা নিয়ে নতুন প্রকাশিত ডিএনএ-ভিত্তিক গণনার রিপোর্টে বড় ধরনের উদ্বেগের চিত্র উঠে এল। দেশে বর্তমানে বন্য হাতির সংখ্যা আনুমানিক ২২,৪৬৬টি, যা ২০১৭ সালের ডিএনএ-ভিত্তিক গণনার (২৭,৩১২টি) তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বা ৪,৮৬৬টি কম। দীর্ঘ চার বছর দেরির পর মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রতীক্ষিত এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
অল-ইন্ডিয়া সিঙ্ক্রোনাস এলিফ্যান্ট এস্টিমেশন (SAIEE) ২০২৫ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে হাতির সংখ্যা ১৮,২৫৫ থেকে ২৬,৬৪৫টির মধ্যে থাকার সম্ভাবনা, যার গড় মান ২২,৪৬৬টি।
কেন চার বছর দেরি?
২০২১ সালে সমীক্ষা শুরু হলেও, তথ্য প্রকাশে এই দীর্ঘ বিলম্বের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জটিল জিনগত বিশ্লেষণ এবং সংগৃহীত তথ্য নিখুঁতভাবে যাচাই করার প্রয়োজনীয়তাকে দায়ী করেছেন।
এই গণনায় অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা হাতির চারণভূমি থেকে মোট ২১,০৫৬টি গোবরের নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং মানুষের জেনেটিক কোডের মতো ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ব্যবহার করে প্রতিটি পৃথক হাতির শনাক্তকরণ নিশ্চিত করেছেন। মোট ৬.৭ লক্ষ কিলোমিটার বনপথ এবং ৩.১ লক্ষেরও বেশি গোবরের প্লট এই এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হাতির বৃহত্তম চারণভূমি এবং রাজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান
অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমঘাট পর্বতমালাই (১১,৯৩৪টি হাতি) এখনও ভারতে বন্য হাতির সবচেয়ে বড় দুর্গ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এর পরেই উত্তর-পূর্ব পাহাড় এবং ব্রহ্মপুত্রের প্লাবনভূমিতে রয়েছে ৬,৫৫৯টি হাতি।
রাজ্যভিত্তিক হিসেবে, কর্ণাটকে এখনও দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হাতি রয়েছে (৬,০১৩টি), এরপর রয়েছে অসম (৪,১৫৯), তামিলনাড়ু (৩,১৩৬), কেরল (২,৭৮৫) এবং উত্তরাখণ্ডে (১,৭৯২)।
অন্যদিকে, ওড়িশায় ৯১২টি, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ডে মিলিতভাবে ৬৫০টিরও বেশি হাতি নথিভুক্ত হয়েছে। মধ্য ও পূর্ব ভারতের কিছু অংশে যেমন, মধ্যপ্রদেশ (৯৭) এবং মহারাষ্ট্রে (৬৩) ক্ষুদ্র ও খণ্ডিত হাতির পাল দেখা যায়।
সংরক্ষণে নতুন ভিত্তি
পরিবেশ মন্ত্রক, প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট এবং ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে এই ২০২৫ সালের মহড়া ভবিষ্যতে হাতির পর্যবেক্ষণ এবং সংরক্ষণ পরিকল্পনার জন্য এক নতুন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করেছে। এই নতুন গণনায় স্থল সমীক্ষা, স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ম্যাপিং এবং জেনেটিক বিশ্লেষণের তিন-পর্যায়ের প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশ্বের অবশিষ্ট এশীয় হাতির ৬০ শতাংশেরও বেশি ভারতে বাস করে। কিন্তু নির্বিচারে অরণ্য দখল, পরিকাঠামো প্রকল্প এবং মানুষ-হাতি সংঘাতের কারণে হাতির আবাসস্থল ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, যা বন্য হাতির অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।