বিগত কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন উত্তর দমদমের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। বাড়ির ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির জলে পড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ছ’মাসের এক শিশুকন্যার। ঘুমের ঘোরে খাট থেকে নিচে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
মৃত শিশুকন্যার নাম ঋষিকা ঘোড়ুই। তার বাবা পাপন ঘোড়ুই পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার এবং মা পূজা ঘোড়ুই। পরিবারের অভিযোগ, লাগাতার বৃষ্টির কারণে এলাকায় জল জমেছিল এবং সেই জল তাদের বাড়ির ভেতরেও ঢুকে পড়েছিল। এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় নিকাশি ব্যবস্থার এতটাই বেহাল দশা যে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং জল সরতে চায় না।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ছোট্ট ঋষিকা খাটে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। তার মা কিছুক্ষণের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। এই সুযোগেই শিশুটি ঘুমের ঘোরে খাট থেকে নিচে, ঘরের মেঝেতে জমে থাকা বৃষ্টির জলে পড়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ফিরে এসে শিশুটিকে জলে ভাসতে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে নিকটস্থ পৌর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে শিশু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উত্তর দমদম পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রশান্ত দাস এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। খবর শুনেই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। আসলে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছিল, তাতেই জল জমেছে। বাচ্চাটা খাটের নিচে পড়ে গিয়েছিল। এখান থেকে পৌর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে আবার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তবে, এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশার অভিযোগ মানতে নারাজ কাউন্সিলর। তিনি বলেন, “যেভাবে বৃষ্টি হলো তাতে যে কোনো জায়গায় সমুদ্র হয়ে যাবে। প্রকৃতিকে ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের কারও নেই। ২ ঘণ্টা আগে যে জল জমে আছে, সেটা তো যাওয়ার সময় দিতে হবে? ওর ঘর রাস্তা থেকেও নিচু। জল জমলেই আমি এলাকা পরিদর্শন করি।” যদিও কাউন্সিলর নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটির কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও, এই ঘটনা আবারও শহরের নিম্নচাপ প্রবণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং তার ভয়াবহ পরিণামকে সামনে নিয়ে এসেছে।