ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বানে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলা। নদীর জল পাহাড় থেকে প্রবল বেগে নেমে এসে ধরালী গ্রামের বিস্তীর্ণ অংশ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ, যার মধ্যে অন্তত ১১ জন জওয়ানও রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ, এসডিআরএফ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পুরোদমে উদ্ধারকাজ চলছে। মঙ্গলবার মাঝরাতে ৭০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধারকাজে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল, দোকান এবং হোটেল সব বন্ধ রাখা হয়েছে। ধারালি গ্রামের ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় একাধিক হোটেলে বন্যার জল ঢুকে পড়েছে। জলের সঙ্গে কাদা-মাটিও ঢুকে বাড়িঘর ও দোকানপাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারালি বাজারের একটি বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভাটওয়াড়িতে প্রায় দেড়শো মিটার রাস্তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, যা মেরামতের জন্য আইটিবিপি কর্মীরা ব্যস্ত রয়েছেন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে দুর্যোগ, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজে কিছু সমস্যা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ধামি জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ চলছে।
উত্তরাখণ্ড জুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে একাধিক জেলায় অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা নদী বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় সাময়িকভাবে কেদারনাথ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। কুলু ও মান্ডির মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। বাগেশ্বরে গোমতী ও সরযূ নদীও উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।