উত্তরবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ‘বিশেষ নির্দেশ’ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন, পাহাড়ি নদীর পাড়কে সুরক্ষিত করতে এবং ধস নিরাময়ের জন্য ম্যানগ্রোভ (Mangrove) এবং ভেটিভার (Vetiver) গাছ লাগানো যেতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘ম্যানগ্রোভ’ মন্তব্যের পরই তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মতে, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ গাছ পাহাড় বা নদীর পাড়ের ধস ঠেকাতে কার্যকর নয়।
শুভেন্দুর তীব্র কটাক্ষ: ‘ছাত্রছাত্রীদের ভুল বার্তা দিচ্ছেন’
ম্যানগ্রোভ মূলত নোনা জল এবং উপকূলীয় এলাকায় জন্মায়। আর উত্তরবঙ্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশের। এই বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেই মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি নিশানা করেন শুভেন্দু অধিকারী।
বিরোধী দলনেতা বলেন,
“সুন্দরবনে চাষ হয় ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ উত্তরবঙ্গে হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভুলগুলি ধরিয়ে দেওয়ার সাহস নেই কারও। উনি এখন রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের ভুল বার্তা দিচ্ছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত সুন্দরবন এবং উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক পার্থক্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেননি। ‘ম্যানগ্রোভ’ লাগানোর মতো ‘অবাস্তব’ পরামর্শ দেওয়ায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক দক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলেছেন।
‘প্রকৃতি দিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করুন’, বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জোর দিয়েছিলেন প্রকৃতির মাধ্যমে প্রকৃতিকে রক্ষা করার উপরেই। তিনি বলেন, “কংক্রিটে আর কাজ হবে না। প্রকৃতি দিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।”
পাহাড়ি নদীর পারে ম্যানগ্রোভ বা ভেটিভারের মতো গাছ লাগিয়ে মাটি ধরে রাখার এবং নদীর স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার উপর তিনি গুরুত্ব দেন। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ম্যানগ্রোভের বিষয়টিকেই বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই ‘ভৌগোলিক ভুল’ বিরোধী শিবিরের হাতে শাসকদলের বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণের অস্ত্র তুলে দিল।