উত্তরপ্রদেশে টানা বর্ষণের ফলে আবারও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য সরকারের ত্রাণ কমিশনারের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের ১৭টি জেলা বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা, যমুনা এবং বেতওয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমার অনেক উপরে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে বহু গ্রাম এবং শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
বিপদসীমার উপরে প্রধান নদীগুলি:
ত্রাণ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গঙ্গা নদী বারাণসী, মির্জাপুর, গাজিপুর এবং বালিয়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। যমুনা নদী অউরাইয়া, কালপি, হামিরপুর, প্রয়াগরাজ এবং বান্দা জেলায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া, বেতওয়া নদীর জলস্তর হামিরপুরে বিপদসীমার উপরে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যা কবলিত জেলাগুলি হলো প্রয়াগরাজ, জলাউন, অউরাইয়া, মির্জাপুর, বারাণসী, কানপুর দেহাত, বান্দা, ইটাওয়া, ফতেহপুর, কানপুর নগর এবং চিত্রকুট সহ মোট ১৭টি জেলা।
বারাণসীর পরিস্থিতি:
বারাণসীতে গঙ্গার জল সোমবার সকাল থেকে বিপদসীমা ৭১.২৬২ মিটার ছাড়িয়ে ৭২.১ মিটারে পৌঁছেছে। শহরের প্রায় সমস্ত ঘাট জলের নিচে চলে গেছে। ‘গঙ্গা সেবা নিধি’র শিবম আগ্রহারি জানিয়েছেন, “ঘাটের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন ছাদে গঙ্গা আরতি করা হচ্ছে এবং মানিকর্ণিকা ও হরিশচন্দ্র ঘাটে উঁচু প্ল্যাটফর্মে চিতাদাহ হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে বারাণসী জেলা প্রশাসন আগামীকাল, বুধবার পর্যন্ত দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা করেছে এবং নদীতে নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
প্রয়াগরাজে বিপর্যস্ত জনজীবন:
প্রবল বৃষ্টির কারণে প্রয়াগরাজে গঙ্গা ও যমুনা উভয় নদীর জলই বিপদসীমা ৮৪.৭৩ মিটার অতিক্রম করেছে। এর ফলে জেলায় প্রায় ২০০টি গ্রাম এবং শহরের ৬০টি বসতি প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন স্কুল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে এবং বন্যা আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ শিবির খুলেছে। সদর তহসিলের রাজাপুর, বেলি কাচার, চাঁদপুর সালোরি, গোবিন্দপুর, ছোট বাঘাড়া ও বড় বাঘাড়া বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা:
বন্যা মোকাবিলায় জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা বন্যা-প্রভাবিত অঞ্চলগুলিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনও যৌথভাবে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্য জুড়ে বজ্রপাত, সাপের কামড়, এবং জলে ডুবে মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আবহাওয়া দপ্তর বুধবার পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করে কমলা সতর্কতা ঘোষণা করেছে।