আসামের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে যৌন হেনস্থা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিন মাস ধরে নিপীড়নের শিকার, গ্রেপ্তার ৭ একাদশ শ্রেণির ছাত্র

আসামের কামরূপ জেলার রাঙিয়ায় অবস্থিত জওহর নবোদয় বিদ্যালয় (জেএনভি)-তে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে তিন মাস ধরে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র। এই ঘটনায় ৭ জন একাদশ শ্রেণির ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যাদের পুলিশ আটক করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত এই আবাসিক বিদ্যালয়ে এমন নৃশংস ঘটনা নিয়ে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ছাত্র এবং অভিযুক্তরা সকলেই বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের আবাসিক। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়ের করা অভিযোগপত্র থেকেই এই তথ্য জানা যায়। প্রাথমিকভাবে ভয়ের কারণে শিশুটি নীরব ছিল। পরবর্তীতে, সে একটি চিঠির মাধ্যমে বিস্তারিত ঘটনা তার অভিভাবকদের জানায়। অভিভাবকরা দ্রুত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এবং তারপর এই জঘন্য ঘটনা পুলিশের নজরে আসে।

পুলিশি তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা:

সূত্রে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, রাঙিয়া থানায় এই ঘটনায় একটি প্রাথমিক মামলা (FIR) দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছাত্রদের মধ্যে একজন তরুণকে আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালত তাদের ১৪ দিনের জন্য সংশোধনাগারে (Juvenile Home) পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে, ভুক্তভোগী ছাত্রের শারীরিক পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে এবং তার চিকিৎসা চলছে। পুলিশ বর্তমানে অভিযুক্তদের এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বয়ান রেকর্ড করছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার ভিত্তিতে তারা খতিয়ে দেখছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানটিতে এ ধরনের আরও কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা। কর্তৃপক্ষ এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদ্যালয় ও ছাত্রাবাসের সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছে।

নবোদয় বিদ্যালয়ে পূর্বেও এমন ঘটনা:

প্রসঙ্গত, নবোদয় বিদ্যালয়গুলিতে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০২২ সালে জেএনভি মোরানে আরেকটি মারাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে প্রায় ৩০-৪০ জন একাদশ শ্রেণির ছাত্র এক পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকাকে আক্রমণ করে, তাকে গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয়। কারণ ওই শিক্ষিকা অভিভাবকদের ছাত্রদের খারাপ আচরণের বিষয়ে জানিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় ২২ জন ছাত্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর নবোদয় বিদ্যালয় সমিতির সহ কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একইসঙ্গে ওই ছাত্রাবাসে জুনিয়র ছাত্রদের ওপর বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধরের মতো নির্যাতনের একাধিক অভিযোগও সে সময় উঠেছিল। অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন যে প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

২০১৬ সালে একই রাঙিয়া জেএনভি-তেই নবম শ্রেণির এক ছাত্র সিনিয়রদের হেনস্থার শিকার হয়ে ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তার মা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, পূর্বে অধ্যক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই ঘটনার পর নবোদয় বিদ্যালয় সংগঠন (Navodaya Vidyalaya Samiti) তদন্ত শুরু করে এবং বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের একটি বয়ানে জেএনভি-তে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করা হয়েছিল, বিশেষ করে ত্রিপুরার একটি বিদ্যালয়ে এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনার পর। এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নবোদয় বিদ্যালয় সমিতি একটি ১৪-পৃষ্ঠার নির্দেশিকা প্রকাশ করে, যেখানে নির্যাতনের বিভিন্ন ধরন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলা হয়, পকসো (POCSO) আইনের অধীনে শাস্তির নির্দেশও দেওয়া হয়।

বর্তমানে এই ঘটনার জেরে জেএনভি বিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। এই পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy