রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)-এর শতবর্ষ উপলক্ষে দেশজুড়ে যখন তাদের কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে, ঠিক তখনই সঙ্ঘকে এক বড় ধাক্কা দিল কর্ণাটকের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (Siddaramaiah) ঘোষণা করেছেন, আরএসএস-কে রাজ্যের কোনও সরকারি স্কুল, কলেজ, মাঠ, ময়দান, পার্ক বা অডিটোরিয়াম— কোথাওই কোনও কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তাঁর অফিসিয়াল এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার) অ্যাকাউন্টে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তাঁর এই পোস্টের সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে গ্রামোন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়্গের (Priyank Kharge) একটি বিস্ফোরক চিঠি। উল্লেখ্য, প্রিয়াঙ্ক হলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের পুত্র।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা? ‘বিভাজন’ সৃষ্টির অভিযোগ
গত ৪ অক্টোবর মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়্গে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে দাবি করেন, আরএসএস-এর সভাগুলিতে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘বিভাজনের সংস্কৃতি’ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সংবিধানের মূল ভাবধারার পরিপন্থী এমন অনেক কথা বলা হয়। তাই, এমন একটি সংগঠনকে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।
চিঠিতে প্রিয়াঙ্ক খাড়্গে আরএসএসকে শুধু সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানাননি, সরাসরি সঙ্ঘের কার্যকলাপ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সেই চিঠিটি পোস্ট করে এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠিটি পাঠিয়ে দ্রুত নির্দেশিকা জারি করতে বলেছেন।
বিজেপি-র পাল্টা আক্রমণ, কংগ্রেসের অন্দরেও জল্পনা
এই নির্দেশের পর কর্ণাটক বিজেপির সভাপতি বিজয়ন্দ্র কঠোর ভাষায় মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খাড়্গের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস সভাপতির পুত্রের আরএসএস সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই।
বিজয়ন্দ্র মনে করিয়ে দেন, ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করা হলেও কয়েক মাস পরই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আরএসএস অংশগ্রহণ করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে সঙ্ঘের বিশাল অবদান রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসেই মতভেদ?
মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে এক্স পোস্টে সরাসরি ঘোষণা করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেসের একটি অংশের মতে, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকার এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিষয়টি কোনও কমিটি বা ফোরামে পর্যালোচনা করা উচিত ছিল।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, এই সিদ্ধান্ত আসলে ব্যক্তি সিদ্দারামাইয়ার একটি নতুন ‘রাজনৈতিক চাল’। উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে তাঁর যে তীব্র বিবাদ চলছে, তাতে নিজের গদি সুরক্ষিত করতেই সিদ্দারামাইয়া আরএসএস-এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যাতে দলে ও সরকারের অভ্যন্তরে তাঁর পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হয়।
এদিকে, আরএসএস নেতৃত্ব অবশ্য এখনও সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সংগঠনের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, সঙ্ঘের নিজস্ব পরিকাঠামোই তাদের কর্মসূচি পালনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সরকার যদি নির্দেশিকা জারি করে সঙ্ঘকে সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করে, তবে তারা নিশ্চিতভাবে আদালতের দ্বারস্থ হবেন, কারণ আরএসএস কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয়।