এক বছর আগে, ৫ই আগস্ট, ২০২৪-এ ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারিভাবে তাঁর পদত্যাগের কথা জানানো হলেও, এক বছর পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি এই ধারণাকে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন, “আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিইনি।” তাঁর এই বিবৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে ঝড় তুলেছে।
এই বিস্ফোরক বিবৃতিটি এমন এক সময়ে এলো, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ব্যাপক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর অনুপস্থিতিতেই এই বিচার চলছে। তবে নির্বাসনে থাকা হাসিনা জানিয়েছেন, “বঙ্গবন্ধুর মতো বীরের রক্ত আমার শরীরে বইছে। আমি হাল ছাড়িনি।”
‘জনগণের প্রতি আমি দায়বদ্ধ’
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে হাসিনা আরও বলেছেন, “আপনাদের বিশ্বাসের প্রতি আমি দায়বদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সৎ, পরিশ্রমী, দেশপ্রেমিক মানুষদের সঙ্গে নিয়েই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ফের উজ্জ্বল হবে।” তিনি জানান, এই বিবৃতি শুধুমাত্র আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নয়, বরং “আগামী লড়াইয়ের প্রস্তুতির ডাক”। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের শাসনে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং বিচারহীনতার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। যদিও মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লিগের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে, হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দলের লড়াই থেমে থাকবে না। তিনি বলেন, “আমরা অতীতেও চরম প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। এবারও পারব। বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করবে, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সংগ্রাম চিরন্তন।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম হাসিনাকে ‘সবচেয়ে বড় অপরাধের মূল চালিকা শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক মহলেও আলোচনায় এসেছে। ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত হাসিনার এই বিচার ও বিবৃতি দিল্লির প্রতিক্রিয়া কোন দিকে নিয়ে যায়, তা এখন দেখার বিষয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, নির্বাসনে থেকেও শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।