“আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিইনি”- চাঞ্চল্যকর দাবি শেখ হাসিনার

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময় তাঁর পদত্যাগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও, এক বছর পর লন্ডন থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, “আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিইনি।” এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যের জেরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

হাসিনার এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এলো, যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। গত বছরের ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ব্যবহার করে ব্যাপক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি নির্বাসনে থাকায় বিচার চলছে তাঁর অনুপস্থিতিতেই।

হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর মতো বীরের রক্ত আমার শরীরে বইছে। আমি হাল ছাড়িনি।” তিনি নিজেকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ বলে উল্লেখ করে বলেন, এই বিবৃতি কেবল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নয়, বরং “আগামী লড়াইয়ের প্রস্তুতির ডাক”।

নির্বাসনে থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই এক বছরে যে বিশৃঙ্খলা, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, বিচারহীনতা এবং শাসনযন্ত্রের রাজনৈতিক অপব্যবহার চলছে, তা থেকে খুব কম মানুষই রেহাই পেয়েছেন।” তিনি শিক্ষকদের উপর হামলা এবং সেনা ও বিচার ব্যবস্থার ওপর হামলার কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, “দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই এখন সময়ের দাবি।”

যদিও অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে, হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে দলের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা অতীতেও চরম প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি। এবারও পারব।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী তাজুল ইসলাম হাসিনাকে “সবচেয়ে বড় অপরাধের মূল চালিকা শক্তি” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের আন্দোলনের সময় ছাত্র ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের দায় ব্যক্তিগতভাবে হাসিনার ওপরই বর্তায়। রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাসনে থেকেও শেখ হাসিনার এই বিবৃতি বাংলাদেশে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এখন দেখার বিষয়, তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy