আবুধাবিগামী বিমানে চরম নাটক! ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় CPR দিয়ে ‘মৃত’ যাত্রীকে বাঁচালেন কেরলের ২ নার্স

প্রথম আন্তর্জাতিক উড়ানই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে এলো। কোচি থেকে আবুধাবিগামী এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট ৩এল১২৮-এ ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে এক সহযাত্রীকে ফিরিয়ে আনলেন কেরলের দুই তরুণ নার্স। চরম পেশাদারিত্ব, দ্রুত সিদ্ধান্ত এবং সাহসিকতার এক বিরল নজির গড়লেন তাঁরা।

কেরলের ওয়ায়ানাডের ২৬ বছর বয়সি অভিজিৎ জিস এবং চেঙ্গান্নুরের ২৯ বছর বয়সি আজীশ নেলসন—দুজনেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘Response Plus Medical’ (RPM) সংস্থায় নতুন করে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। বিমানের উড্ডয়নের মাত্র কুড়ি মিনিট পরেই শুরু হয় সেই নাটকীয় মুহূর্ত। ত্রিশূরের এক যাত্রী হঠাৎ আসনে ঢলে পড়েন। তাঁর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল এবং কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না।

অভিজিৎ দ্রুত পালস পরীক্ষা করেন এবং দেখেন কোনো নড়াচড়া নেই। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি বুঝতে পারেন, যাত্রী কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সিপিআর (CPR) শুরু করেন এবং কেবিন ক্রুদের খবর দেন। পাশে এসে দাঁড়ান আজীশ। বিমানের অতি সীমিত জায়গায়, ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায়, তাঁরা দু’দফায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সিপিআর চালিয়ে যান।

আজীশ পরে বলেন, “আমরা একটুও ভয় পাইনি। শুধু ভেবেছিলাম, এক সেকেন্ডও দেরি করা চলবে না।”

তাঁদের এই দ্রুত সিদ্ধান্ত এবং নিখুঁত দক্ষতায় মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই মিরাকল ঘটে। ওই যাত্রীর দেহে পালস ফিরে আসে, তিনি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে শুরু করেন। এরপর ডা: আরিফ আব্দুল খদির নামের এক চিকিৎসক বাকি চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আবুধাবিতে বিমান অবতরণের পর রোগীকে বিমানবন্দরের মেডিকেল টিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

এই দুই তরুণ নার্স নীরবে নিজেদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দিলেও, এক সহযাত্রীর মাধ্যমে পুরো ঘটনাটি RPM কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছায়। কর্তৃপক্ষ অভিজিৎ ও আজীশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানায় এবং তাঁদের এই কাজকে “পেশার সত্যিকারের মর্ম” বলে আখ্যা দেয়। কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত যাত্রীর পরিবার জানায়, “ওরা আমাদের প্রিয়জনকে দ্বিতীয়বার জীবন দিয়েছে। ওদের সাহস ও মানবিকতা চিরকাল আমাদের প্রার্থনায় থাকবে।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy