আফগান তালিবানের হামলায় ২৩ পাক সেনা শহিদ! পাল্টা আঘাতে ২০০ জঙ্গিকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের, উত্তপ্ত সীমান্ত

শনিবার রাতে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। আফগান তালিবান বাহিনীর আকস্মিক হামলায় অন্তত ২৩ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে রবিবার স্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। যদিও পাকিস্তান সেনা পাল্টা আঘাতে ২০০ জনেরও বেশি তালিবান ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে।

আফগান হামলার বিবরণ:
পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র লড়াই হয়েছে। হামলায় ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা শহিদ এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। পাল্টা আক্রমণে একাধিক তালিবান ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে এবং অন্তত ২০০ জন তালিবান ও তাদের সহযোগী নিহত হয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে।

পাকিস্তানের দাবি, এই হামলা ছিল সম্পূর্ণ অকারণ ও উসকানিমূলক এবং ইসলামাবাদের তরফে কোনো প্ররোচনা দেওয়া হয়নি। আফগান বাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়ার আঙ্গুর আড্ডা, বাজৌর, খুররম, দির, চিত্রাল এবং বালোচিস্তানের বাহরাম চাহ এলাকায় হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনা পাল্টা আত্মরক্ষার্থে সীমান্ত পেরিয়ে তালিবানের ঘাঁটিগুলিতে লক্ষ্যনির্ভর আঘাত হানে।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতা:
এই হামলার নেপথ্যে আফগান তালিবানের পাশাপাশি পাকিস্তানি তালিবান বা টিটিপি-র ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে টিটিপি-কে ভারতের সমর্থন রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে এবং রবিবারের বিবৃতিতেও ইসলামাবাদ সেই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “এই আক্রমণের লক্ষ্য সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি কার্যকলাপকে আরও উৎসাহিত করা।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলার কয়েকদিন পরই এই সীমান্ত সংঘর্ষ হলো। কাবুলের তালিবান সরকার দাবি করেছিল, শনিবারের সীমান্ত হামলা ছিল সেই ঘটনারই জবাব। আফগান সরকারের মুখপাত্র আরও দাবি করেন যে তাদের পাল্টা আঘাতে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং বেশ কয়েকটি পাক ঘাঁটি দখল করা হয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনো আপস হবে না। প্রতিটি প্ররোচনার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।” অন্যদিকে, এই সংঘর্ষের সময়েই আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে রয়েছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ইরান, সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশ ইতিমধ্যেই দুই পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy