বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (SIR) অভিযান শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই রাজ্যের দুই শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা— প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং বর্তমান উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহার দুটি করে ভোটার কার্ড থাকার ঘটনা সামনে এসেছে। নির্বাচন কমিশন উভয় নেতাকেই নোটিস জারি করে জবাব চেয়েছে। এই ঘটনা দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। যদি আপনারও একাধিক ভোটার কার্ড থাকে, তবে তা সনাক্ত করা এবং বাতিল করা আপনার আইনি দায়িত্ব।
কেন একাধিক ভোটার কার্ড রাখা একটি গুরুতর সমস্যা?
একজন ব্যক্তির একাধিক ভোটার কার্ড থাকা একটি অপরাধ। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ১৭ এবং ১৮ অনুযায়ী, একই নির্বাচনী এলাকায় বা একাধিক নির্বাচনী এলাকায় একাধিক ভোটার কার্ড থাকা অবৈধ। এটি করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যার ফলে জরিমানা বা এমনকি জেলও হতে পারে। একাধিক ভোটার কার্ড থাকলে ভোটদানে অনিয়ম এবং নির্বাচনী রেকর্ডে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে।
কীভাবে জানবেন আপনার নামে দুটি ভোটার কার্ড আছে কিনা?
এই সমস্যাটি সনাক্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের পরিষেবা ব্যবহার করা।
- অনলাইন পদ্ধতি: আপনাকে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট (NVSP) অথবা ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপে যেতে হবে। সেখানে ‘Search Electoral Roll’ বিকল্পে গিয়ে আপনার নাম, বাবার নাম এবং জন্ম তারিখের মতো তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন। যদি আপনার একাধিক ভোটার কার্ড থাকে, তাহলে অনুসন্ধানের ফলাফলে একাধিক কার্ডের বিবরণ দেখতে পাবেন।
- অফলাইন পদ্ধতি: যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই, তারা তাদের এলাকার বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। বিএলও-এর কাছে তার এলাকার সমস্ত ভোটারের তালিকা থাকে এবং তিনি আপনাকে সহজেই বলতে পারবেন যে আপনার নামে একাধিক কার্ড আছে কিনা।
ডুপ্লিকেট ভোটার কার্ড পেলে কী করবেন?
যদি আপনি জানতে পারেন যে আপনার নামে একাধিক ভোটার কার্ড আছে, তবে আতঙ্কিত না হয়ে অবিলম্বে একটি বাতিল করার পদক্ষেপ নিন।
- ফর্ম-৭ পূরণ: একটি কার্ড বাতিল করার জন্য আপনাকে ফর্ম-৭ পূরণ করতে হবে। এই ফর্মটি অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায় অথবা আপনার এলাকার বিএলও-এর কাছেও পাওয়া যাবে।
- সময়মতো পদক্ষেপ নিন: তেজস্বী যাদব বা বিজয় কুমার সিনহার মতো নির্বাচন কমিশনের নোটিসের মুখোমুখি হতে না চাইলে, সময়মতো আপনার অতিরিক্ত ভোটার কার্ডটি বাতিল করুন। নোটিসের জবাব দিতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাখতে প্রতিটি নাগরিকের সচেতন এবং দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত আপনার ভোটার কার্ডের তথ্য পরীক্ষা করুন এবং কোনো ভুল বা অসঙ্গতি পেলে তা দ্রুত সংশোধন করুন। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো প্রতিটি ভোট সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই ভোটদান প্রক্রিয়াকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।