আন্তঃজাতীয় প্রেম করে বিয়ের জেরে শ্বশুরবাড়ির রোষের শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন এক নার্সিং ছাত্র। বিহারের দরভাঙ্গা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ২৫ বছর বয়সী রাহুল কুমার। এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তন্নু প্রিয়ার চোখের সামনেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাহুল কুমার দরভাঙ্গা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের বিএসসি (নার্সিং) বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি একই বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তন্নু প্রিয়াকে প্রায় চার মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেন। তন্নুর পরিবার, বিশেষ করে তাঁর বাবা প্রেমশঙ্কর ঝা, এই বিয়েতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং বরাবরই তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তন্নু জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একজন হুডি পরা ব্যক্তি রাহুলের দিকে এগিয়ে আসে। কাছে আসতেই তিনি চিনতে পারেন, সেটি তাঁর বাবা প্রেমশঙ্কর ঝা। হাতে বন্দুক নিয়ে তিনি তাঁদের হোস্টেলের সামনে রাহুলের বুকে গুলি করেন। তন্নু বলেন, “আমার স্বামী আমার চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার কোলে লুটিয়ে পড়েন।” তিনি আরও দাবি করেন যে, এই হত্যাকাণ্ডে শুধু তাঁর বাবা নয়, তাঁর পুরো পরিবার জড়িত।
এই ঘটনার পর রাহুলের সহপাঠী ও হোস্টেলের অন্যান্য ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা ঘটনাস্থলেই প্রেমশঙ্কর ঝাকে বেধড়ক মারধর করেন, যার ফলে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই হাসপাতালেই ভর্তি করতে হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাটনার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে দারভাঙ্গার জেলাশাসক কৌশল কুমার এবং সিনিয়র পুলিশ সুপার জগন্নাথ রেড্ডি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান। ছাত্রদের তীব্র বিক্ষোভের কারণে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করতে হয় এবং ছাত্রদের সাময়িকভাবে হাসপাতাল চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এসএসপি জগন্নাথ রেড্ডি সাংবাদিকদের জানান, “আমরা জানতে পেরেছি যে এক নার্সিং ছাত্র প্রেম করে বিয়ে করায় তাঁর শ্বশুর তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমরা ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” এই নির্মম ঘটনা বিহারজুড়ে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং নিহত ছাত্রের পরিবার ও সহপাঠীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।