ভারতের আকাশসীমা আধুনিকীকরণের পথে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF)। চলতি মাসের শেষের দিকে নাসিকের হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL)-এর ঘাঁটিতে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট (LCA) মার্ক ১এ, অর্থাৎ তেজস যুদ্ধবিমানের প্রথম হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই অনুষ্ঠান ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতির বাস্তবায়নের একটি প্রতীকী সূচনা।
তেজস ১এ: মোট ৮৩টি বিমানের অর্ডার
IAF-এর জন্য মোট ৮৩টি তেজস ১এ যুদ্ধবিমান অর্ডার করা হয়েছে। প্রথম বিমানটি ইতিমধ্যেই হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত এবং দ্বিতীয় বিমানও শিগগিরই যোগ দেবে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সহ সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতে পারেন।
জিই (GE) ইঞ্জিন সরবরাহে কিছু সমস্যা হওয়ায় তেজস ১এ-এর হস্তান্তর কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিল। তবে সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সেই সাপ্লাই চেইনের সমস্যা এখন সমাধান হয়েছে এবং পরবর্তী ইঞ্জিনগুলো শীঘ্রই দেশে পৌঁছাবে।
সুখোই-৩০ এমকেআই: দেশীয় উপাদানে শক্তি বৃদ্ধি
রাশিয়ান ডিজাইনের আরও ১৩টি সুখোই-৩০ এমকেআই বিমানও IAF-এর শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই বিমানগুলি তৈরি হবে প্রায় ৫৯ শতাংশ দেশীয় উপাদান দিয়ে, যা আত্মনির্ভর ভারত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
হস্তান্তরের সময়: প্রথম সুখোই বিমানটি ২০২৭ সালে হস্তান্তর করা হবে এবং ২০২৯ সালের মধ্যে বাকিগুলি যুক্ত হবে।
ক্ষমতা বৃদ্ধি: বর্তমানে IAF-এর কাছে প্রায় ২৬০টি সুখোই বিমান রয়েছে। নতুন ১৩টি বিমান যোগ হলে সামরিক ক্ষমতা আরও বাড়বে।
লক্ষ্য: IAF বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রনে পরিচালিত হচ্ছে, যা ৪০ স্কোয়াড্রন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
ভবিষ্যতের রাফালে: দেশীয় উৎপাদনের পথে
IAF ইতিমধ্যে দুটি রাফালে স্কোয়াড্রন চালু করেছে। ভবিষ্যতে যদি আরও রাফালে বিমান ক্রয় করা হয়, তবে সেগুলোর একটি বড় অংশ দেশেই উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে:
১. ইঞ্জিন উৎপাদন: সাফরান (Safran) ইঞ্জিন দেশীয়ভাবে উৎপাদন করবে।
২. অ্যাসেম্বলি: একটি প্রাইভেট ফার্ম ফিউজেলাজ তৈরি করবে এবং চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি দেশের ভেতরেই হবে।
৩. অস্ত্র সংযোজন: DRDO-র তৈরি এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিমানটির অস্ত্রপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বর্তমানে IAF-এর ১১৪টি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তেজস ১এ, সুখোই-৩০ এবং ভবিষ্যতে রাফালে ক্রয়ের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে। ভারতের আকাশসীমা আধুনিকীকরণ এবং দেশীয় উৎপাদনের এই সমন্বয়, দেশের রণক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে।