আড়িয়াদহে ত্রাসের রাজত্ব, জেলবন্দি জয়ন্তের ভাই শুভমের বিরুদ্ধে যুবককে মারধরের অভিযোগ, ফের শোরগোল

ঠিক এক বছর আগে আড়িয়াদহ কাণ্ডে শিরোনামে উঠে আসা জয়ন্ত সিং বর্তমানে জেলবন্দি থাকলেও, এবার সেই একই এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে তার ভাই শুভম সিংয়ের বিরুদ্ধে। সাইকেলে ধাক্কা লাগার মতো তুচ্ছ অজুহাতে এক যুবককে বাঁশ ও ইট দিয়ে বেধড়ক মারধর এবং মাথা ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে শুভম ও তার দলবলের বিরুদ্ধে, যা আড়িয়াদহে ফের আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করেছে। আক্রান্ত যুবক জিৎ দাসকে রক্তাক্ত অবস্থায় ১৫ মিনিট রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন, অভিযুক্তরা অধরা

ঘটনার পর রক্তাক্ত জিৎ দাসকে তাঁর বন্ধুরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসার পর আতঙ্কে নিজেকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন জিৎ। দক্ষিণেশ্বর থানায় শুভম ও তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে জিতের পরিবার। কিন্তু ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও অভিযুক্তরা অধরা থাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (সাউথ) অনুপম সিং জানিয়েছেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এর নেপথ্যে কী কারণ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আশা করা যায় দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।” তবে পুলিশের এই আশ্বাসবাণী এলাকার মানুষের আতঙ্ক কমাতে পারছে না।

কী ঘটেছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়?

কামারহাটির আড়িয়াদহ পাটবাড়ির বাসিন্দা জিৎ দাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাড়ার মধ্যেই সাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। সেই সময় জয়ন্তর ভাই শুভম, তার এক সঙ্গী নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ, শুভমরা জিতের সাইকেলে তাদের ধাক্কা লাগার অজুহাত দিয়ে যুবকের সঙ্গে বচসায় জড়ায়। জিতের এক বন্ধু প্রতিবাদ করতে গেলে শুভমের দলবলের হুমকির মুখে পড়েন এবং তিনি আর কিছু বলার সাহস পাননি। এরপরই শুভম বাঁশ দিয়ে জিৎকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে এবং ইট দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন জিৎ এবং প্রায় মিনিট পনেরো ওইভাবেই রাস্তায় পড়েছিলেন। এরপর স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

আক্রান্ত জিতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা

আক্রান্ত যুবক জিৎ দাস ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, “মারধরের পর শুভম বলতে থাকে, ‘জয়ন্ত সিংকে এখন কেউ ভয় পাচ্ছেন না! এবার থেকে সবাই ভয় পাবে। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না আমাদের। আইন-কানুন সব আমাদের পকেটে থাকে।’ পাড়ার মধ্যেই যদি এভাবে আক্রান্ত হতে হয়, তাহলে তো বাইরে বেরনো যাবে না! আমার বন্ধুরা এগিয়ে না এলে ওঁরা প্রাণেই মেরে ফেলত। এখন তো বাড়ি থেকে বেরতেই ভয় লাগছে। আমি এর বিচার চাই।”

জিতের মা রিঙ্কু দাসও এই ঘটনায় আতঙ্কিত। তিনি বলেন, “বিনা কারণে আমার ছেলেকে মারধর করেছে জয়ন্ত সিংয়ের ভাইয়েরা। শুনলাম আমার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই সাইকেলে ধাক্কা লাগার অছিলায় মারধর করতে থাকে ছেলেকে। পরে ওর বন্ধুরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরাও হাসপাতালে যাই। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। দোষীদের শাস্তি হোক।”

পুরনো সন্ত্রাসের ছায়া: সাক্ষীকে হুমকির ঘটনা

উল্লেখ্য, এর আগেও জেলবন্দি জয়ন্ত সিংয়ের দাপট লক্ষ্য করা গিয়েছিল আড়িয়াদহ এলাকায়। জয়ন্তর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার ‘অপরাধে’ স্থানীয় বাসিন্দা বিমল পাঁজা ও তাঁর পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল। ফেসবুক লাইভ করে সেই ‘হুমকি’ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন আড়িয়াদহ কাণ্ডে অন্যতম সাক্ষী বিমল পাঁজা। তিনি এর নেপথ্যে জয়ন্ত সিংয়ের ঘনিষ্ঠ শাগরেদ সুশোভন সরখেলকে দায়ী করে পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর তিনিও আতঙ্কে গৃহবন্দী হয়েছিলেন।

আড়িয়াদহে জয়ন্ত সিংয়ের পরিবারের সদস্যদের এই লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠছে, জেলবন্দি থাকার পরেও কীভাবে এই গ্যাংয়ের দাপট অব্যাহত রয়েছে? স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার এবং এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy