কলকাতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একটি গোপন কার্যালয় চালু হওয়ার খবর দুই বাংলাতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে এই খবর সামনে আসার পর থেকেই নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সাধারণত আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় ঢাকার ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত। সেখান থেকেই এতদিন দলের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর দল কি এবার কলকাতা থেকে নিজেদের কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে? এমন প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
রোববার মালয়েশিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সফর নিয়ে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কলকাতায় আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্ন করা হয়। জবাবে ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের বাইরে থেকে এমন কার্যকলাপ চালিয়ে এখানে পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে চায়। আমরা এটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।” শফিকুল আলমের এই মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
এদিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেছে যে, কলকাতায় পার্টি অফিস খোলার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। তারা অভিযোগ করেছে যে, এটি দখলদার সরকারের পক্ষ থেকে ছড়ানো একটি গুজব। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “দখলদারেরা সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। এমনকি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও দখল করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করে এবং এই দলের সমস্ত কার্যক্রম বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়।”
এই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে সেনাবাহিনী থেকে পলাতক মেজর জিয়া। তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট করে লেখেন, “কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস হয়েছে! তাহলে মণিপুর, খালিস্তান আর কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলোর অফিস এ দেশে (বাংলাদেশে) হবে না কেন?” মেজর জিয়ার এই মন্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।
কলকাতায় আওয়ামী লীগের কথিত কার্যালয় এবং এই বিষয়ে দুই দেশের রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।