আইএস-এর আদর্শে ছেলেকে উগ্রপন্থী করার অভিযোগ, মা ও সৎ-বাবার বিরুদ্ধে UAPA-তে মামলা, তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা

এক ১৬ বছর বয়সী কিশোরকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস (IS)-এর আদর্শে উগ্রপন্থী করার অভিযোগে তার মা এবং সৎ-বাবার বিরুদ্ধে কঠোর UAPA (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও (NIA) তদন্তে যোগ দিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত যুক্তরাজ্যে: পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরটির মা এবং দ্বিতীয় স্বামী গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন। অভিযোগ, বিদেশে থাকাকালীন নাবালকটিকে দীর্ঘকাল ধরে চরমপন্থী ভিডিও দেখানো হচ্ছিল, যার মধ্যে আইএসের প্রচার, শিরশ্ছেদের দৃশ্য এবং নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলার গ্রাফিক ক্লিপ ছিল। উদ্দেশ্য ছিল কিশোরকে মানসিকভাবে ‘জিহাদি ধারণা’য় উদ্বুদ্ধ করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ‘চরম ধর্মীয় মতবাদ’ প্রচার করা।

তদন্তে উঠে আসা বিস্ফোরক তথ্য: জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরটি তদন্তকারীদের জানিয়েছে, তার মা ও সৎ-বাবা তাকে বলত—

  • “ভারত একটি ইসলামবিরোধী দেশ।”

  • “আইএস ধর্ম রক্ষার জন্য লড়াই করছে।”

  • “একদিন তোমাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, “এটি সাধারণ পারিবারিক নির্যাতন নয়। এখানে একটি পরিকল্পিত মৌলবাদ রয়েছে। এটি একটি প্রক্রিয়া যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।”

মাদ্রাসায় অস্বাভাবিক আচরণ: প্রথম দফার ‘মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের’ (Brainwashing) পর, কিশোরটিকে কেরালায় আনা হয় এবং একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক শিশুটির আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন। তাঁরা দাবি করেন, কিশোরটি আইএসের প্রশংসা করত, সহপাঠীদের জিহাদে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করত এবং হিংসাত্মক ভিডিও দেখাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করত। শিক্ষকরা দ্রুত প্রশাসনকে খবর দিলে জেলা শিশু সুরক্ষা বিভাগ ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

মামলা ও তদন্ত: কেরালা পুলিশ মা এবং সৎ-বাবার বিরুদ্ধে UAPA, ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ডিজিটাল প্রমাণ, আর্থিক লেনদেন এবং বিদেশে যোগাযোগের উৎস খতিয়ে দেখছে পুলিশ ও এনআইএ। অভিযুক্তরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে।

কিশোরের মৌলবাদমুক্তকরণ প্রক্রিয়া: উদ্ধারকৃত কিশোরটি এখন শিশু সুরক্ষা বিভাগের অধীনে একটি নিরাপদ স্থানে রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি দল তাকে নিয়মিত কাউন্সেলিং দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মানসিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাটি পরিবার থেকে মৌলবাদের ঝুঁকি এবং অনলাইনে শিশুদের নজরদারির গুরুত্ব তুলে ধরে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy