ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) মুদ্রানীতি কমিটির (MPC) সিদ্ধান্তের দিকে এখন গোটা দেশের চোখ। বহুল প্রতীক্ষিত সেই ঘোষণাটি আগামীকাল, শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর, ২০২৫) হবে। বুধবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট (bps) রেপো রেট কমানোর প্রত্যাশা নিয়ে এমপিসি বৈঠক শুরু হয়েছে।
ছয় সদস্যের এই রেট-নির্ধারক প্যানেলের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি কাল ঘোষণা করবেন RBI গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। মূল্যস্ফীতি হ্রাস, জিডিপি (GDP) বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো গুরুত্বপূর্ণ পটভূমিতে এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
📉 রেপো রেট সিদ্ধান্তের প্রধান প্রভাবক:
২০২৫ সালে RBI এখনও পর্যন্ত তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে।
-
ক্রিসিল (Crisil)-এর পূর্বাভাস: ক্রিসিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ধর্মাকীর্তি জোশী বলেন, “আমরা ডিসেম্বরে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর পূর্বাভাস দিচ্ছি। প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকলেও, অক্টোবরে খুচরো মূল্যস্ফীতির উল্লেখযোগ্য হ্রাস এই সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ তৈরি করেছে।”
-
গভর্নরের ইঙ্গিত: বিশেষভাবে উল্লেখ্য, গভর্নর মালহোত্রা নিজেই অক্টোবরে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে নীতিগত সুদের হার আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে।
⚖️ বিপরীতমুখী অর্থনৈতিক সংকেত: জিডিপি বনাম মূল্যস্ফীতি
তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মত, RBI রেপো রেট নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:
১. রেকর্ড জিডিপি: ২০২৫-২৬-এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা অর্থনীতির জোরালো গতি বজায় থাকার ইঙ্গিত দেয়। ২. তলানিতে মূল্যস্ফীতি: কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI)-ভিত্তিক খুচরো মূল্যস্ফীতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিম্ন সীমা ২ শতাংশের নীচে রয়েছে বিগত দুই মাস ধরে। RBI-কে খুচরো মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে (±২ শতাংশ মার্জিন) রাখার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে।
-
ব্যাঙ্ক অফ বরোদার মত: ব্যাঙ্ক অফ বরোদার অর্থনীতিবিদ অদিতি গুপ্তা মনে করছেন, ডিসেম্বরের বৈঠকে RBI-এর MPC রেপো রেট অপরিবর্তিত (বর্তমানে ৫.৫০ শতাংশ) রাখতে পারে।
-
কেয়ারএজ রিপোর্ট: ক্রেডিট রেটিং সংস্থা কেয়ারএজ (CareEdge)-এর রিপোর্ট অবশ্য উল্টো কথা বলছে। মূল্যস্ফীতিতে তীব্র পতন এবং শক্তিশালী বৃদ্ধির গতির কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর ঘোষণা করতে পারে।
সবমিলিয়ে, আগামীকাল রেপো রেট কমানোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও, বাজারে একটি বড় পদক্ষেপের প্রত্যাশা তুঙ্গে। এই সিদ্ধান্তই আবাসন এবং শিল্প ঋণের হার নির্ধারণে মূল ভূমিকা নেবে।