প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এলো এক নাটকীয় মোড়। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের রায় খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছে, সমস্ত নিয়োগ বহাল থাকবে। আদালতের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক ও আইনি মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা এসেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছ থেকে। তিনি ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য: “সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় ছিল তথ্যভিত্তিক। আর ডিভিশন বেঞ্চের রায় হল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। বিচারব্যবস্থার প্রক্রিয়া এক হওয়া উচিত।”
দুর্নীতির স্বীকৃতি: তাঁর দাবি, সরকার নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মমাফিক হয়নি। তিনি বলেন, “আদালত প্রথম মানবিক দিক থেকে রায় দিল। এতে অযোগ্যরা একটা বড় অস্ত্র পেয়ে গেল।”
পরবর্তী পদক্ষেপ: শুভেন্দু জানান, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হলে তিনি আরও বিশদ বিশ্লেষণ করবেন এবং বঞ্চিতদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পথ খোলা আছে।
⚖️ আইনজীবীদের উদ্বেগ: ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি পেল প্রশ্রয়’
আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন বাম সাংসদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। তিনি মনে করেন, এই রায়ের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি প্রশ্রয় পেল, যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বিকাশবাবুর অভিযোগ: তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, আদালতে যে দুর্নীতির তথ্য জমা পড়েছে, তা আইনি প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব না পেলে ভবিষ্যতে দুর্নীতি আরও বাড়বে।
মামলার অন্যতম পিটিশনার ও বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া ছিল আরও কঠোর।
তরুণজ্যোতির মন্তব্য: “আজকের রায়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কার্যত মান্যতা পেল। আদালত মানবিক দিক দেখে চাকরি বহাল রেখেছে। কিন্তু যারা বঞ্চিত হল, তাদের পরিবারের কোনও মূল্য নেই?”
নিয়ম বনাম মানবিকতা: তাঁর দাবি, মানবিকতা এবং ন্যায়বিচার কখনও এক জিনিস হতে পারে না। ত্রিপুরা শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক এসএসসি মামলার রায়—সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি প্রমাণিত হলে চাকরি বাতিলই নিয়ম। সেই প্রেক্ষিতে ৩২ হাজার নিয়োগ বহাল রাখা ‘অস্বাভাবিক’।
🔎 লড়াই কি শেষ?
তবে আশার আলো দেখিয়ে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি উল্লেখ করেন, আদালত রায়ে জানিয়েছে, দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত চলবে এবং রিজার্ভেশন সংক্রান্ত সব মামলা সিঙ্গেল বেঞ্চেই চলবে। তিনি বলেন, এর অর্থ হলো, “লড়াই শেষ হয়নি, বরং আরও এক ধাপ এগোল।”