লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তৃণমূলের মুখ্যসচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংসদীয় দলের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই ঘোষণা হয়, যার পরপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো ঝড় তুলেছে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সংঘাতই এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কাজ করেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে মুখ খুলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। তিনি বলেন, “মমতাদি অভিযোগ করেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিকমতো হচ্ছে না, ফলে আঙুল তো আমার দিকেই তোলা হচ্ছে। তাই আমি ছেড়ে দিলাম।” ক্ষুব্ধ কল্যাণ আরও অভিযোগ করে বলেন, “দিদি বলছেন ঝগড়া করছে। যাঁরা আমাকে গালাগাল দেয় আমি কি সহ্য করব? দলকে জানিয়েছি, দল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করে উল্টে আমাকেই দোষারোপ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো ভাবে দল চালাক। লোকসভায় ভালো করে দল চলুক।” মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যে তাঁর ক্ষোভ এবং দলের নিষ্ক্রিয়তায় তাঁর হতাশা স্পষ্টভাবে উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও অভিযোগ, একজন আইনজীবী হিসেবে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা দেখতে হয়, একই সাথে তাঁকে সংসদে মুখ্যসচেতকের দায়িত্বও সামলাতে হয়। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, “সব দায় দায়িত্ব কি একা নেবো? সংসদে কেউ থাকেন না। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ, দিনের পর দিন আসেন না, কাকলি মাঝেমধ্যে থাকেন। কেউ কেউ শাড়ি পরে সেজেগুঁজে এসে নরেন্দ্র মোদি মুর্দাবাদ বলে চলে যান। আমাকে রাজ্য সরকারের মামলা সামলাতে হবে, এসএসসি, ওবিসি মামলা সব দেখতে হবে, আবার সাড়ে দশটা থেকে সংসদে থাকতে হবে, এটা তো হয় না।”
নিজের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়ে কল্যাণ জানিয়েছেন যে, তিনি ডেপুটি স্পিকার এবং লোকসভায় দলের উপনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে বলে এসেছেন, এবার থেকে যেন তাঁকে সংসদে পিছনের সারিতে কোনও আসন দেওয়া হয়।
তবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে তাঁর পদত্যাগের সাথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। শ্রীরামপুরের এই সাংসদ বলেন, “দিদি যখন ঠিক করেছেন অভিষেক যোগ্য তাহলে নিশ্চয়ই সমন্বয় ভালো হবে। আমি কোনো অন্যায় কথা মানতে পারবো না। তাতে রাজনীতি ছাড়তে হলে ছেড়ে দেবো। অভিষেকের সাথে আমার কোনো মতবিরোধ নেই। আমার সঙ্গে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক।”
অভিমানী সুরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন বলবেন, রাজনীতি ছেড়ে দেব। দিদি বলেছেন, লোকসভায় সমন্বয় হচ্ছে না, আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।”
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এদিনের বৈঠকের শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় দলের কয়েকজন সাংসদের মধ্যে চলা ব্যক্তিগত সংঘাত নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি এও মন্তব্য করেন যে, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেতার দায়িত্বে থাকার সময় এমনটা ঘটত না। এরপর তিনি লোকসভায় তৃণমূলের কাজকর্ম দেখার ভার কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেন। এই বৈঠকের পরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন।