প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি গুজরাটের ভূজ-এ ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দশেরা উপলক্ষে ‘শস্ত্র পূজা’ করার পর তিনি ইসলামাবাদকে যেকোনো “দুঃসাহসিক কাজ” থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছেন।
রাজনাথ সিং-এর কড়া বার্তা
পাকিস্তান কর্তৃক বিতর্কিত স্যার ক্রিক অঞ্চলে সামরিক পরিকাঠামো সম্প্রসারণের পরই রাজনাথ সিং-এর এই মন্তব্য এল। তিনি বলেন, “স্যার ক্রিক সন্নিহিত এলাকায় তাদের (পাকিস্তানের) সামরিক পরিকাঠামোর সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ তাদের উদ্দেশ্য প্রকাশ করে।”
তিনি কঠোরভাবে সতর্ক করে বলেন, “যদি পাকিস্তান স্যার ক্রিক সেক্টরে কোনো কাজ করার সাহস দেখায়, তবে তার জবাব এতটাই শক্তিশালী হবে যে তা ইতিহাস ও ভূগোল উভয়কেই বদলে দেবে।” পাকিস্তানকে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “১৯৬৫ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী লাহোর পর্যন্ত পৌঁছানোর সাহস দেখিয়েছিল এবং ২০২৫ সালে পাকিস্তানকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে করাচির পথও এই খাঁড়ি দিয়ে যায়।”
স্যার ক্রিক বিতর্কের মূল কারণ
ভারতের কচ্ছ অঞ্চল থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশকে বিভক্তকারী ৯৬ কিমি দীর্ঘ এই জোয়ারের খাঁড়ি (tidal estuary) উভয় দেশের কাছেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাছ ধরার গুরুত্বপূর্ণ উৎস ও তেল-গ্যাস ভান্ডারের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিতর্কের মূলে রয়েছে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা:
ভারতের দাবি (‘থালওয়েগ নীতি’): ভারত আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন, ‘থালওয়েগ নীতি’ (Thalweg principle) অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণের দাবি জানায়। এই নীতি অনুসারে, দুটি রাজনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে জলপথের সীমানা অবশ্যই নেভিগেবল চ্যানেলের মাঝখানে স্থির করতে হবে। ১৯২৫ সালের একটি মানচিত্রে এই দাবি সমর্থিত। ভারত মনে করে, জোয়ারের সময় স্যার ক্রিক নৌ-চলাচলের উপযুক্ত।
পাকিস্তানের দাবি (‘১৯১৪ রেজোলিউশন’): পাকিস্তান ১৯১৪ সালের একটি ব্রিটিশ রেজোলিউশনের উদ্ধৃতি দিয়ে সমগ্র এলাকাটিকে নিজের অঞ্চল বলে দাবি করে। এই রেজোলিউশন অনুযায়ী, খাঁড়িটির পূর্বাংশের তীর বরাবর সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল। পাকিস্তান থালওয়েগ নীতি প্রত্যাখ্যান করে, কারণ তাদের মতে স্যার ক্রিক নৌ-চলাচলের উপযোগী নয়।
রাজনাথ সিং বলেন, ভারতের বারবার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তানের “দুরভিসন্ধি”র কারণে এই ইস্যু এখনও বিদ্যমান।
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার
রাজনাথ সিং এই কৌশলগত স্যার ক্রিক সেক্টরে একটি জোয়ার-নির্ভর বার্থিং সুবিধা (tidal-berthing facility) এবং একটি যৌথ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Joint Control Centre – JCC) উদ্বোধন করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, এই সুবিধাগুলি সমন্বিত উপকূলীয় অভিযান এবং দ্রুত হুমকি মোকাবিলায় যৌথ অপারেশনাল ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে।