সীমান্তে ক্রমাগত ড্রোন হামলা, বিশেষ করে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের আক্রমণ মোকাবিলায় এবার বড়সড় পদক্ষেপ নিল ভারত। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) ৩০০ কিলোওয়াট উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার (High-Powered Laser – HPL) অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই অত্যাধুনিক লেজার সিস্টেমটি ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই লেজার অস্ত্রটি ২০ কিলোমিটার দূর থেকে MALE (Medium-Altitude Long-Endurance) এবং HALE (High-Altitude Long-Endurance) ধরণের ড্রোনগুলিকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম হবে।
লেজার সিস্টেমের প্রাণকেন্দ্র: বিম কন্ট্রোল সিস্টেম (BCS)
এই ৩০০ kW লেজার সিস্টেমের মূল অংশ হল বিম কন্ট্রোল সিস্টেম (BCS)। এর কাজ হল লেজার রশ্মিকে লক্ষ্যবস্তুর উপর সুনির্দিষ্টভাবে ফোকাস করা। DRDO-এর CHESS সেন্টার BCS তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত অংশীদারদের খোঁজে RFI (Request for Information) জারি করেছে।
অংশীদারদের কাজ হবে ৩০০ kW লেজার কোরের সঙ্গে BCS-কে একীভূত করা এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ফিল্ড ট্রায়াল পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করা।
নকশা এবং কার্যকারিতা
এই সিস্টেমে ৫০-৭০ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি বিম-ডিরেক্টিং টেলিস্কোপ থাকবে। এর অভিযোজিত অপটিক্স (Adaptive Optics) প্রযুক্তি বায়ুমণ্ডলীয় হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও লেজারকে দীর্ঘ-পাল্লার নির্ভুল লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
বিশাল পাল্লা: অপটিক্যাল পেরিস্কোপিক হেড বিমকে ১৮০ ডিগ্রি এবং উচ্চতা -১৫ থেকে +৭০ ডিগ্রিতে দ্রুত সরাতে পারে।
উচ্চ-গতির অস্ত্র মোকাবিলা: এর ফলে ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো উচ্চ-গতির লক্ষ্যবস্তুগুলিকে একই নির্ভুলতার সাথে ট্র্যাক করে ধ্বংস করা সম্ভব হবে।
দিনরাত, যেকোনো আবহাওয়ায় কাজ করতে সক্ষম
BCS-এ একটি বায়ুমণ্ডলীয় জিটার ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা (Atmospheric Jitter Compensation System) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা বাতাসের গতি এবং তাপমাত্রার কারণে সৃষ্ট লেজার বিকৃতি সংশোধন করে। এতে একটি লেজার ইলুমিনেটর মডিউল এবং লক্ষ্য শনাক্ত ও ট্র্যাকিংয়ের জন্য একটি ইলেক্ট্রো-অপটিক কোর্স ট্র্যাকিং সিস্টেমও যুক্ত আছে। ফলে, এই অস্ত্র দিনরাত এবং যেকোনো আবহাওয়ায় কাজ করতে সক্ষম হবে।
লক্ষ্য: ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে পরীক্ষা
এই ৩০০ কিলোওয়াট লেজার সিস্টেমের শক্তি পূর্ববর্তী ১০০ কিলোওয়াট প্রোটোটাইপের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি মোবাইল প্ল্যাটফর্মে, যেমন ট্রাক বা বায়ুবাহিত সিস্টেমে মাউন্ট করা যেতে পারে। DRDO-এর লক্ষ্য হল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ড্রোনের ঝাঁক বা আগত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা। সংস্থাটি ২০২৭-২৮ সালে পোখরান রেঞ্জে এই সিস্টেমের ফিল্ড ট্রায়াল পরিচালনা করার এবং পরে এটিকে সম্পূর্ণরূপে মোবাইল অপারেশনের জন্য তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।
এই লেজার অস্ত্র ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।