পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (GPF)-এর সুদের হারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখল রাজ্য সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জন্য (১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) GPF-সহ অন্যান্য সমতুল্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের হার বার্ষিক ৭.১%-এ অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই হার রাজ্য সরকারের আওতাধীন সমস্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সাড়ে পাঁচ বছরের স্থিতাবস্থা: স্বস্তি নাকি হতাশা?
আশ্চর্যের বিষয় হলো, টানা সাড়ে পাঁচ বছর ধরে এই ৭.১% সুদের হারে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই দীর্ঘ স্থিতাবস্থা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে, এমন এক সময়ে যখন মুদ্রাস্ফীতি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে চলেছে এবং অন্যান্য সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার ওঠানামা করছে, তখন অন্তত সুদের হার না কমাটা অনেকের কাছে স্বস্তিদায়ক। কিন্তু অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে সুদের হার না বাড়ানোয় অনেকেই হতাশ। তাঁদের যুক্তি, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ৭.১% সুদ যথেষ্ট নয়, বিশেষত যখন অবসর পরবর্তী জীবনের মূল ভরসা এই সঞ্চয়।
কর্মচারী সংগঠনগুলির দাবি, সরকারের যুক্তি
সামাজিক মাধ্যমে এবং কর্মচারী সংগঠনগুলির ফোরামে এই বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে। বহু কর্মচারী ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে GPF সুদের হার বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অবসরের পর জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সঞ্চয়ের উপর প্রাপ্ত সুদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুদের হার বাড়লে তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা আরও মজবুত হবে।
তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয়। এটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নেওয়া হয়েছে। কারণ কেন্দ্রও তার কর্মীদের জন্য জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের হার ৭.১% বজায় রেখেছে। এছাড়াও, রাজ্যের কোষাগারের উপর বাড়তি চাপ এড়াতে এবং সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের পথরেখা
বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের হার না বাড়ানোটা অনেক কর্মচারীর কাছে অপ্রত্যাশিত। তাঁদের একাংশের মতে, এতে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই স্থিতাবস্থা কি সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন, নাকি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতি উদাসীনতা – সেই প্রশ্নই এখন রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে এবং কর্মচারী মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। আগামী দিনে এই সুদের হার নিয়ে কর্মচারীদের চাপ এবং সরকারের পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।