সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নজরদারি চালানো সংস্থা Financial Action Task Force (FATF) এক বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে জঙ্গিরা তাদের নাশকতার জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন পেমেন্ট পরিষেবাগুলিকে হাতিয়ার করছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের রসদও অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সাইট থেকে কেনা হয়েছিল বলে FATF-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রযুক্তির অপব্যবহার: নতুন কৌশল জঙ্গিদের
FATF-এর ‘সন্ত্রাসে আর্থিক লেনদেন’ সংক্রান্ত রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, মানুষের সুবিধার জন্য চালু হওয়া ডিজিটাল পরিষেবা এবং প্রযুক্তি-নির্ভর আর্থিক লেনদেন এখন জঙ্গিদের হাতে অপব্যবহৃত হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জঙ্গিরা অনলাইন মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করছে, সেই অর্থ অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করছে এবং নাশকতার সরঞ্জাম কেনার জন্য অনলাইনে তা ব্যবহারও করছে। অনলাইন লেনদেনের সহজলভ্যতা, দ্রুততা এবং anonymity (নাম প্রকাশ না করার সুযোগ) জঙ্গিদের কাছে এটিকে পছন্দের মাধ্যম করে তুলেছে।
পুলওয়ামা থেকে গোরক্ষনাথ: চাঞ্চল্যকর উদাহরণ
রিপোর্টে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই হামলায় ব্যবহৃত ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED)-এর মূল উপাদান অ্যালুমিনিয়াম পাউডার অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স সাইট থেকে কেনা হয়েছিল। এই হামলায় ৪০ জন CRPF জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন এবং এর পিছনে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ জড়িত ছিল। সেই সময়ের তদন্তেও অনলাইন মাধ্যমে হামলার সরঞ্জাম সংগ্রহ ও প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে এসেছিল।
শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে গোরক্ষনাথ মন্দিরে হামলার ঘটনাও রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে। সেখানে এক ISIS-অনুপ্রাণিত যুবক নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। জানা গেছে, ওই হামলাকারী পেপ্যাল ব্যবহার করে ISIS এজেন্টদের কাছে ৬.৭ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিল। নিজের অবস্থান গোপন করতে সে একাধিক VPN পরিষেবা ব্যবহার করে এবং ৪৪ বার বিদেশে লেনদেন চালায়। সন্দেহের জেরে পেপ্যাল তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।
FATF-এর উদ্বেগ: P2P লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় মদদ
FATF আরও দাবি করেছে যে, অনলাইন রাসায়নিক, 3D প্রিন্টেড সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরকের উপাদান কেনার পাশাপাশি জঙ্গিরা অনলাইনে অনুদানও সংগ্রহ করছে। Peer-to-peer (P2P) লেনদেনের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি ছদ্মনামে লেনদেনের সুযোগ দেওয়ায়, কোন টাকা সন্ত্রাসীদের কাছে যাচ্ছে তা ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
রিপোর্টে কিছু দেশের সরকার কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে, যদিও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে ভারত বরাবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে আসছে এবং পাকিস্তানকে FATF-এর ধূসর তালিকায় ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছে। এই রিপোর্ট বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস দমনে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া দেশগুলির জন্য এক কঠিন বার্তা বহন করছে।