“অনলাইনে কন্টেন্ট দেখতে আধার দিয়ে বয়সের প্রমাণ?”- সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ

বিতর্কিত এবং অশ্লীল অনলাইন কনটেন্টগুলির উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে এবার আধার কার্ড ব্যবহার করে বয়সের প্রমাণ (Age Verification) বাধ্যতামূলক করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে।

সম্প্রতি, ইউটিউবার ও পডকাস্টার রণবীর এলাহাবাদিয়ার শো-তে বিতর্কিত মন্তব্য করা এবং কমেডিয়ান সময় রায়নার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের (Spinal Muscular Atrophy আক্রান্ত) নিয়ে মজা করার অভিযোগে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতেই আদালত মনে করে, সব অনলাইন কনটেন্টের উপরে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যিক।

প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ:

প্রধান বিচারপতি (CJI) কান্ত বলেন, “এটাই সমস্যা! আমি নিজের মতো চ্যানেল খুলে বসলাম, কারও কাছে আমার জবাবদিহি করার ব্যাপার নেই, এটা তো হতে পারে না! কাউকে না কাউকে তো দায়বদ্ধ হতেই হবে!”

বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “বিতর্কিত কোনও মেটিরিয়াল আপলোড হওয়ার পরে যতক্ষণে প্রশাসন তা দেখে ব্যবস্থা নেবে, ততক্ষণে সেটা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। লাখ লাখ ভিউয়ার তা দেখে ফেলেছেন। সেটা কী ভাবে কন্ট্রোল করা সম্ভব?”

আধার ভেরিফিকেশনের প্রস্তাব:

এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই প্রধান বিচারপতি কান্ত একটি বড় প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “কোনও শো শুরুর আগে কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটা ডিসক্লেমার দেখানো হয়, সেটা পড়ে দর্শক কনটেন্টটি দেখবেন কি না, স্থির করার আগেই সম্প্রচার শুরু হয়ে যায়!”

তাঁর সংযোজন: “সেক্ষেত্রে ডিসক্লেমার দেখানোর পরে আধার কার্ড নথিভুক্ত করার একটা অপশন রাখা যেতে পারে, যাতে দর্শকদের বয়স ভেরিফাই করার পরে প্রোগ্রাম শুরু হবে। এটা একেবারেই একটা প্রস্তাব।”

স্বশাসিত সংস্থা গঠনের নির্দেশ:

শীর্ষ আদালত অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়মনীতি আনতে কেন্দ্রকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। সিজেআই বলেন, “এই কারণেই আমরা একটা স্বশাসিত সংস্থা আনার কথা বলছি। এই সমাজে বাচ্চাদেরও বাক্‌স্বাধীনতা রয়েছে… আপনারা যদি সবকিছু সম্প্রচার বা এয়ার করার অনুমতি দেন, তা হলে কী করে হবে? সকলের তো এই কোর্টে এসে মামলা লড়ার সামর্থ্য নেই।”

প্রধান বিচারপতি মনে করেন, স্বশাসিত সংস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, বিচারব্যবস্থা, ও মিডিয়ার লোকজন থাকতে পারেন।

কমেডিয়ান সময় রায়নাকে নির্দেশ:

বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের নিয়ে মজা করার অভিযোগে সময় রায়নার বিরুদ্ধে ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অট্রোফি’ নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও মামলা করে। এনজিও-র আইনজীবী আদালতে বলেন, “বাচ্চাগুলোর সম্মান চাই।”

এই প্রসঙ্গে আদালত সময় রায়নার উদ্দেশে নির্দেশ দিয়েছে: “‘স্পাইনাল মাস্কুলার অট্রোফি’র শিকার শিশুদের নিয়ে একটা শো করুন। তারা আপনার থেকে টাকা চায় না, হৃত সম্মান ফেরত চায়। আপনার প্ল্যাটফর্মকে সেই কাজে ব্যবহার করুন।”

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy