‘অচল রাস্তাঘাট’-এর কুখ্যাতি ঘুচছে! রায়রংপুরকে শীঘ্রই আলাদা জেলা ঘোষণা, কী কী মেগা প্রকল্প আসছে এই শহরে?

ওড়িশার মায়ুরভঞ্জ জেলার এক সময়ের অবহেলিত জনপদ রায়রংপুর এখন দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর জন্মভূমি হিসেবে নতুন মর্যাদা ও স্বপ্নের আলোয় ভাসছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই জনপদের চেহারা দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। একসময় ধুলোকাদা, ভগ্নপ্রায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা আর অপ্রতুল অবকাঠামোর জন্য পরিচিত রায়রংপুর এখন উন্নয়নের প্রতীক।

ইস্পাত ও কংক্রিটের নতুন স্থাপত্য
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর রায়রংপুরে উন্নয়নের গতি বেড়েছে বহুগুণে। এটি ছিল ‘মুর্মু প্রভাব’-এর প্রথম ঝলক।

নতুন মর্যাদা: এ বছরের জুলাই মাসেই রায়রংপুরকে আলাদা পুলিশ জেলা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই এটি আলাদা জেলা হিসেবেও ঘোষিত হতে পারে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা: নতুন একটি আয়ুর্বেদ কলেজ, একটি বহুমুখী আয়ুষ হাসপাতাল এবং একটি আদিবাসী গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।

খেলাধুলা ও পরিকাঠামো: প্রায় ৪৩ কোটি টাকার স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং সিনথেটিক ট্র্যাক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত এয়ারস্ট্রিপকেও আঞ্চলিক বিমান উন্নয়ন কর্মসূচি ‘উড়ান’-এর অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।

উত্তর ওড়িশার ভাগ্য বদলাবে রেল প্রকল্প
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি মুর্মু তিনটি নতুন রেললাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যার মোট খরচ ৬,২৯৪ কোটি টাকা। খনিজসমৃদ্ধ মায়ুরভঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব ছিল, নতুন লাইন চালু হলে সেই সমস্যা মিটবে:

যোগাযোগের উন্নতি: নতুন রেললাইন চালু হলে খনিজ পরিবহণ দ্রুততর হবে, ভ্রমণের সময় কমবে এবং রায়রংপুর সরাসরি ঝাড়খণ্ড ও উপকূল ওড়িশার সঙ্গে যুক্ত হবে।

অর্থনৈতিক সুযোগ: বুরমারা–চাকুলিয়া রেললাইন ঝাড়খণ্ডের শিল্পকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগ দেবে এবং বাদামপাহাড়–কেন্ডুজগড় লাইন শিল্প ও সিমলিপাল ন্যাশনাল পার্কে পর্যটন বাড়াবে।

অন্যান্য উন্নয়ন ও প্রত্যাশা
এই উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে:

আদিবাসী উন্নয়ন: মুর্মুর প্রতিষ্ঠিত এসএলএস ট্রাস্ট-এর এলঅ্যান্ডটি স্কিল হাবে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এছাড়া, ওড়িশায় অনুমোদিত ১০০টি একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩টি মায়ুরভঞ্জেই তৈরি হচ্ছে।

শিল্প ও কর্মসংস্থান: একটি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প পার্কও পরিকল্পনায় রয়েছে।

রায়রংপুরের এই দ্রুত পরিবর্তনকে অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের কেন্দ্র হিঞ্জিলি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কেন্দ্র সাংবালপুরের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে মানুষের প্রত্যাশা একটাই—এই সব প্রতিশ্রুত অগ্রগতি যেন শুধু কাগজে-কলমে আটকে না থাকে, বাস্তবেও যেন গড়ে ওঠে এক আধুনিক ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রায়রংপুর।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy