পানিপথ জেলার সিওয়াহ গ্রামে চার শিশুকে রহস্যজনকভাবে হত্যার ঘটনায় এক নতুন ও ভয়াবহ মোড় এসেছে। নিহতদের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত পুনম নামে এক নারী তিনটি ভিন্ন সময়ে মোট চারটি শিশুকে হত্যা করেছেন এবং প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে একাদশীর পুণ্য তিথিতে! এর ফলে এই নৃশংস ঘটনার পেছনে কোনও তান্ত্রিক রীতি বা গুপ্ত আচারের যোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ জোরালো হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তিনটি হত্যাকাণ্ডের পদ্ধতিই ছিল একই রকম, যা কোনওভাবেই আকস্মিক বা স্বাভাবিক বলে মনে হয় না।
💧 জিয়ার মৃত্যুতে ফাঁস হয় রহস্য
সম্প্রতি জিয়া নামে এক কিশোরীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর পরিবারের সন্দেহ চরমে ওঠে। নিহত জিয়ার কাকা সুরেন্দ্র জানান, অভিযুক্ত পুনম তাঁর খুড়তুতো বোন এবং ১৮ আগস্ট সিওয়াহ গ্রামে আসেন। সেই রাতে জিয়া পুনমের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়েছিল। পরদিন সকালে জিয়াকে খুঁজে না পেয়ে খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়।
জিয়ার মৃত্যুর পরই সুরেন্দ্রর সন্দেহ পুনমের দিকে যায়। সরাসরি জিজ্ঞাসা করলে পুনম কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং আত্মহত্যার হুমকি দেয়।
🤫 পরিবারের নীরবতার মাশুল: আরও ভয়ঙ্কর পরিণতি
প্রথম দিকে সামাজিক লজ্জা এবং ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ ভেবে পরিবারের সদস্যরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেননি। কিন্তু এই নীরবতার মাশুল দিতে হয় আরও ভয়ঙ্করভাবে।
সুরেন্দ্র জানান, তিনি ঘটনার সময়গুলি মেলাতে গিয়ে দেখেন যে তিনটি শিশুহত্যাই একই পদ্ধতিতে একাদশী তিথিতে ঘটেছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এটি কাকতালীয় নয়, বরং পুনম কোনও তান্ত্রিক আচারের অংশ হিসেবেই এই হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটিয়েছে। পরিবার আরও দাবি করেছে, প্রথম হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় দেড় বছর পুনম কোনও অপরাধ করেনি, কারণ সে তখন গর্ভবতী ছিল।
⛓️ কঠোরতম শাস্তির দাবি: মৃত্যুদণ্ড ছাড়া ন্যায় মিলবে না
পুনমের চাচাতো ভাই সুরেন্দ্র প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, এটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং ধারাবাহিক শিশুহত্যা। তিনি মনে করেন, এই ধরনের অপরাধে অভিযুক্তের জন্য যাবজ্জীবন বা স্বল্পমেয়াদী সাজা যথেষ্ট নয়।
“যদি পুনম কখনও জামিন বা প্যারোলে মুক্তি পায়, ভবিষ্যতে সে আবারও শিশুদের ক্ষতি করতে পারে। তাই এই ধরনের নৃশংস অপরাধে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র ন্যায়সঙ্গত শাস্তি,” দাবি পরিবারের।
এদিকে, এই ঘটনা গ্রামজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গ্রামবাসীদের মনে প্রশ্ন— এই হত্যাগুলি কি সত্যিই গুপ্তচর্চা বা তান্ত্রিক রীতির অংশ? অভিভাবকরাও তাঁদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি তান্ত্রিক রীতি, মানসিক অস্থিরতা, নাকি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ধারাবাহিক অপরাধ— তদন্তের পরই প্রকৃত সত্য জানা যাবে। গ্রামবাসীরা অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।