পার্ক সার্কাসের ব্যস্ত স্টেশনের ভিড়ই এখন মোবাইল চোরদের প্রধান হাতিয়ার। আর সেই ভিড়কে কাজে লাগিয়ে চুরি করা স্মার্টফোনগুলি নিমিষেই পাচার হয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সীমান্তে। কলকাতা পুলিশের সাম্প্রতিক তদন্তে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে— পশ্চিমবঙ্গ থেকে চুরি হওয়া দামী মোবাইল ফোনের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশই শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশে।
আইফোন হারিয়ে খুলনায় লোকেশন!
এই পাচারচক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে একটি আইফোন ১৫-কে কেন্দ্র করে। কয়েক সপ্তাহ আগে পার্ক সার্কাস স্টেশনের ভিড়ে এক কলেজছাত্রীর হাত থেকে তাঁর নতুন আইফোনটি ছিনতাই হয়। তিনি বালিগঞ্জ জিআরপি-তে অভিযোগ জানালে তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু অবাক করার মতো তথ্য আসে ৩ ডিসেম্বর। আইফোনের ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যায়, ফোনটি বর্তমানে বাংলাদেশের খুলনায় অবস্থান করছে এবং সেখানে একটি স্থানীয় সিম কার্ডও ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাচারের ‘এক্সপ্রেস’ রুট:
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ফোনটি চুরির মাত্র ৭ দিনের মাথায় একাধিক হাত ঘুরে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। পুলিশের ভাষায়:
সিন্ডিকেট: দুই দেশের দুষ্কৃতীদের নিয়ে তৈরি একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেট এই কাজ করছে।
সুরক্ষা: পশ্চিমবঙ্গে চোরাই মোবাইল বিক্রিতে ধরা পড়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ, কিন্তু সীমান্ত পার করতে পারলেই সেই ঝুঁকি প্রায় শূন্য।
সময়: কলকাতা থেকে সীমান্তের ওপারে ফোন পৌঁছাতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক দিন।
কেন উদ্ধার অসম্ভব?
এক তদন্তকারী অফিসারের মতে, আইফোনের মতো উন্নত প্রযুক্তির ফোনে লোকেশন জানা গেলেও আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে যাওয়া ডিভাইস উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকলেও, এই পাচারকারীরা নিত্যনতুন পথ ও কায়দা ব্যবহার করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই সিন্ডিকেট আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনসাধারণের জন্য সতর্কবার্তা:
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, চুরি হওয়া ফোনের প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকি অংশটি চিরতরে হারিয়ে যায় বিদেশের বাজারে। পার্ক সার্কাস, শিয়ালদহ বা বালিগঞ্জের মতো ব্যস্ত স্টেশনে মোবাইল ব্যবহারের সময় নাগরিকদের অতিরিক্ত সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছে লালবাজার ও জিআরপি।