দেশের জন্য লড়েছিলেন যিনি, সেই বীর সৈনিকই এখন গাঁজা পাচারের কুখ্যাত চক্রের কিংপিন! ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি দমন অভিযানে অংশ নেওয়া ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG)-এর প্রাক্তন কম্যান্ডো বজরং সিংকে অবশেষে বুধবার রাতে রাজস্থানের চুরু জেলা থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রাজস্থান পুলিশের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন গাঁজনেয়’।
গ্রেফতারের পর বজরং সিং-এর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২০০ কেজি গাঁজা। ইন্সপেক্টর জেনারেল বিকাশ কুমার জানিয়েছেন, এই কুখ্যাত পাচারকারীর নামে ২৫ হাজার টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল।
বিএসএফ থেকে এনএসজি, তারপর অপরাধ জগৎ
রাজস্থানের সিকার জেলার বাসিন্দা বজরং সিং লম্বা-চওড়া চেহারা ও ফিটনেসের জোরে প্রথমে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF)-এ যোগ দেন। পাঞ্জাব, অসম, রাজস্থান, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করার পর, তাঁর দক্ষতার জন্য তিনি এনএসজি কম্যান্ডো হিসেবে নির্বাচিত হন। সাত বছর এনএসজি-তে কাজ করার সময়ই তিনি ২৬/১১ মুম্বই হামলায় দেশের জন্য লড়েন।
তবে ২০২১ সালে গ্রামে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরই তাঁর জীবনে মোড় আসে। এই সময় থেকেই অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা শুরু হয় এবং সেখান থেকেই তিনি গাঁজা পাচারের দুনিয়ায় প্রবেশ করেন। অভিযোগ, তিনি তাঁর পুরনো বিএসএফ সংযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত এই চক্রের কিংপিন হয়ে ওঠেন।
কুইন্টাল-খানেক গাঁজাই ছিল টার্গেট
বজরং ছোটখাটো চালানে জড়াতেন না। তেলঙ্গানা ও ওড়িশা থেকে একসঙ্গে কুইন্টাল-খানেক গাঁজা এনে রাজস্থানে পাচার করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।
গত বছর, ২০২৩ সালেও হায়দরাবাদের কাছে প্রায় দুই কুইন্টাল গাঁজা-সহ তিনি একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
‘অপারেশন গাঁজনেয়’: কীভাবে ধরা পড়ল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অপরাধী?
বজরং একজন কড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাক্তন কম্যান্ডো হওয়ায় তাঁকে ধরা সহজ ছিল না। অ্যান্টি টেরোরিস্ট স্কোয়াড (ATS) ও অ্যান্টি নারকোটিকস টাস্ক ফোর্স (ANTF) দু’মাস ধরে তাঁকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তিনি ভুয়ো মোবাইল আইডি ব্যবহার করে এবং প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থেকে বারবার পুলিশের হাত ফসকাচ্ছিলেন।
অবশেষে তাঁর গৃহকর্মীর যোগাযোগ সূত্র ধরে পুলিশ গোপন খবর পায়। বুধবার মোটরবাইকে চলাফেরার সময় পুলিশ তাঁকে অনুসরণ করে এবং হঠাৎ অভিযান চালিয়ে তাঁকে পাকড়াও করা হয়।
আইজি বিকাশ কুমার জানান, “সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পর এই অভিযান সফল হয়েছে। বজরং-এর মতো কড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক অপরাধীকে ধরা রাজস্থানে সন্ত্রাস-নারকো নেক্সাস ভাঙার এক বড় পদক্ষেপ।”