ফের একবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের পথে রাজ্য সরকার। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের যে সংঘাত দেখা গিয়েছিল, ২০২৫ সালে ভোটার তালিকা সংশোধনের (SIR) ইস্যুতে তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেবার পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে সংঘাত হয়েছিল, এবার সংঘাতের মূল কারণ ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা।
২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মীরা পাণ্ডে নামটি একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। পঞ্চায়েত ভোটের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিচালনার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছিলেন। রাজ্য সরকার এই দাবির বিরোধিতা করে রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট করানোর পক্ষে ছিল। সংঘাত এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পাঁচ দফায় ভোট হয়। সে সময় রাজ্য সরকারের তীব্র বিরাগভাজন হওয়া সত্ত্বেও মীরা পাণ্ডে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।
এবার অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন, তবে সংঘাতের মূল সুর একই। এবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন নয়, সরাসরি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল সরকার। জাতীয় নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য SIR প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিহারে ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভোটার তালিকা থেকে একজনও বাদ পড়লে কমিশনের অফিস ঘেরাও করা হবে।
২০২৫ সালের এই সংঘাতের একটি নতুন দিক হলো, নির্বাচনের কাজে যুক্ত চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে তৈরি হওয়া টানাপোড়েন। এই বিতর্কের আবহেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব মনোজ পন্তকে বুধবার দিল্লিতে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। এই তলবকে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় কমিশনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক মহল।
২০১৩ সালে মীরা পাণ্ডের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন যেভাবে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় বাহিনী ইস্যুতে পিছু হঠতে বাধ্য করেছিল, ২০২৫ সালেও কি ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে SIR প্রক্রিয়া দেশজুড়েই হবে। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলের রণংদেহী মেজাজ সত্ত্বেও কমিশন কি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে, নাকি এই সংঘাতের কোনো নতুন সমাধানসূত্র বের হবে, তা দেখতে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই সংঘাত আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে।