১১-র পালাবদলও আটকাতে পারেনি তাঁকে! প্রয়াত কিংবদন্তি আদিবাসী নেতা উপেন্দ্র কিস্কু

জঙ্গলমহলের রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায়ের অবসান। প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বাম নেতা উপেন্দ্র কিস্কু। বুধবার রাতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর নশ্বর দেহ বাঁকুড়া জেলা সিপিএম কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে গুরুতর চোট পান তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় তাঁকে দ্রুত নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক উপেন্দ্রবাবু রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ‘কেন্দু পাতা আন্দোলন’-এর অন্যতম মুখ ছিলেন। আদিবাসী সমাজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার সেই লড়াই থেকেই তাঁর উত্থান।

রাজনৈতিক জীবনের কিছু স্মরণীয় মাইলফলক:

টানা ৮ বারের বিধায়ক: ১৯৭৭ সালে রায়পুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন। এরপর টানা আটবার তিনি ওখানকার মানুষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

২০১১-র ব্যতিক্রম: রাজ্যে পালাবদলের ঝড়ে যখন অনেক দাপুটে বাম নেতা পরাজিত হয়েছিলেন, তখনও রায়পুর কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি।

মন্ত্রী হিসেবে সাফল্য: ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা ২৪ বছর তিনি রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন।

জঙ্গলমহলের রূপকার: তাঁর উদ্যোগেই জঙ্গলমহলের গ্রামগুলোতে অসংখ্য সরকারি স্কুল ও আদিবাসী সমবায় সমিতি গড়ে ওঠে। ‘আদিবাসী অধিকার মঞ্চ’ গঠনেও তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

দলের কাজে নিজেকে সঁপে দিতে একসময় শিক্ষকতার চাকরিও ছেড়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের পর সক্রিয় সংসদীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও, শেষদিন পর্যন্ত রায়পুরের দলীয় কার্যালয়ে তাঁর যাতায়াত ছিল নিয়মিত। তাঁর প্রয়াণে বাঁকুড়া তথা গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy