পূর্ব মেদিনীপুরের গর্ব, প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক তাম্রলিপ্ত রাজবাড়ি আবারও সেজে উঠেছে তার হাজার বছরের পুরোনো লোকউৎসবকে কেন্দ্র করে। রাজবাড়ির ময়দানে শুরু হয়েছে ‘তাম্রলিপ্ত জনস্বাস্থ্য কৃষি ও কুটির শিল্প মেলা’। প্রায় ৯৭৫ বছরের প্রাচীন এই মেলাটি কেবল জেলা নয়, আজ গোটা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে পরিণত হয়েছে। এই মেলার গুরুত্ব এতটাই যে, ভারতীয় ডাক বিভাগ ইতিমধ্যেই এই মেলার নামে বিশেষ ডাকটিকিট ও খাম প্রকাশ করেছে।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, রাজবংশের ৩৫তম রাজা শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ রায় কৃষিকাজের প্রসারের লক্ষ্যে এই মেলার সূচনা করেছিলেন। মাঝখানে ব্রিটিশ শাসনে থাকাকালীন বেশ কিছু বছর এই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৯৮ সালে রাজবাড়ির পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন কমিটি গড়ে পুনরায় স্বমহিমায় ফিরে আসে এই উৎসব। বর্তমানে এই কমিটির প্রধান হলেন রাজপরিবারের বংশধর তথা তাম্রলিপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান ড. দীপেন্দ্র নারায়ণ রায়। তিনি জানান, “এই মেলা আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে চলে আসছে। ব্রিটিশরা বন্ধ করলেও আমরা সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছি। আজ এই মেলা জেলার মানুষের কাছে এক বড় আবেগ।”
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী এই হেরিটেজ রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে আয়োজিত মেলাটি এবার আরও বৈচিত্র্যময়। এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল প্রায় ১২টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি এবং বিশেষ সেমিনার। কৃষিজ পণ্য থেকে শুরু করে কুটির শিল্পের এক বিশাল সম্ভার সাজানো হয়েছে এখানে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই রাজকীয় মেলা। ইতিহাসের টানে আর কুটির শিল্পের সম্ভার দেখতে প্রতি বছরের মতো এবারও ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।