রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (RSS) শতবর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত সশস্ত্র বিপ্লবের পথকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিলেন। তিনি স্পষ্ট জানান, বিশ্বের ইতিহাসে কোনো বিপ্লবই নিজের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারেনি। বিপ্লব নয়, গণতান্ত্রিক পথই সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে।
নাগপুরের রেশমবাগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
প্রতিবেশী দেশগুলির অস্থিরতা ও ভারতের বিপদ
সম্প্রতি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে (জেন জি আন্দোলনের ফলে কেপি শর্মা ওলি সরকারের পতন) সরকার পতনের ঘটনা প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের শক্তি ভারতের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয়। তারা দেশে অশান্তির আবহাওয়া তৈরি করতে চাইছে।
আরএসএস প্রধানের বক্তব্য:
“সরকার যখন জনগণের থেকে অনেকটা দূরে থাকে এবং তাদের সমস্যাগুলির প্রতি উদাসীন থাকে, তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং তারা প্রশাসনের বিরোধিতা করে। কিন্তু এভাবে সশস্ত্র বিপ্লবের পথে সমস্যাগুলির সমাধান হয় না।”
তিনি রাজনৈতিক বিপ্লবের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, যেসব সাম্যবাদী দেশগুলিতে বিপ্লব হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই এখন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। হিংসা ও আন্দোলনে কোনো লক্ষ্যই পূরণ হয় না, বরং দেশের বাইরে থাকা শক্তিগুলি এই সুযোগকে ব্যবহার করে তাদের খেলা শুরু করে।
প্রতিবেশী দেশগুলি একসময় ভারতের অংশ ছিল এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। তাই এই অস্থিরতার প্রভাব ভারতেও পড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
আত্মনির্ভরতার ওপর জোর ও শুল্ক নীতি
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক নীতির প্রসঙ্গ তুলে মোহন ভাগবত ভারতের আত্মনির্ভর হওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি মনে করেন, আমেরিকার এই শুল্ক নীতি তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার খাতিরেই তৈরি।
সরসঙ্ঘচালক বলেন, “বিশ্ব পারস্পরিক আন্তঃনির্ভরতার মধ্য দিয়ে কাজ করে। তবে আমাদের আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে হবে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, এই আন্তঃনির্ভরতা যেন আমাদের জন্য আবশ্যিক না হয়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্বদেশি এবং স্ব-অবলম্বনের কোনো বিকল্প হয় না।
হিন্দু রাষ্ট্র এবং ভারতের বিশ্ব নেতৃত্ব
ভাষণের অন্য একটি অংশে মোহন ভাগবত হিন্দু সমাজের শক্তি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারত রাষ্ট্র আদতে হিন্দু রাষ্ট্র।
“হিন্দু সমাজ দায়িত্বশীল। ‘আমরা’ এবং ‘ওরা’ এই ধারণা কখনও ছিল না এই সমাজে। আমাদের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক ঐক্যই আমাদের শক্তি।”
বিশ্বে ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দুনিয়া এখন আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্ব চায়, ভারত নেতৃত্ব দিক এবং পৃথিবীকে পথ দেখাক।”