যখন সমুদ্রের জল ২৬.৫°C ছাড়িয়ে যায়, তখন তা কার্যত ঘূর্ণিঝড়ের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। ফুটন্ত জলের মতো তাপমাত্রা দ্রুত জলীয় বাষ্প তৈরি করে, যা উপরের দিকে উঠতে থাকে। আমরা যাকে মেঘ ভাবি, আসলে তা এই ঘূর্ণিঝড়ের ‘শক্তি-ঘর’।
এই বাষ্প উপরে উঠে ঘনীভূত হলেই তাপ নির্গত হয়। আর এই তাপই হল ঘূর্ণিঝড়ের আসল শক্তি, যা তার ক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, এই ঊর্ধ্বগামী বাতাসের শূন্যস্থান পূরণ করতে চারপাশ থেকে বাতাস প্রবল বেগে কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে এই বাতাস সোজা না গিয়ে ঘুরতে শুরু করে— জন্ম নেয় এক বিশাল ঘূর্ণায়মান বায়ু-স্রোতের।
বাষ্প বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের চাপ দ্রুত ও বিপুল পরিমাণে কমতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে এই চাপের পার্থক্য হঠাৎ করেই যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, ঠিক তখনই একটি সাধারণ ঝড় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
এই মুহূর্তে বাতাসের গতি প্রথমে ২০০ কিমি/ঘণ্টা, এবং মুহূর্তের মধ্যে তা ২৫০ কিমি/ঘণ্টা বা ৩০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এই গতিতে সমুদ্রের জল বিশাল দেওয়াল হয়ে আছড়ে পড়ে, আর ভারী ট্রাকও খেলনার মতো উড়ে যায়। ১৯৯৯ সালের ওড়িশা সুপার সাইক্লোনে ২৬০ কিমি/ঘণ্টা বেগে বাতাস এবং ৬ মিটার উঁচু ঢেউ ছিল সেই ধ্বংসের সাক্ষী।
আসলে, ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কেবল বাতাসের উপর নির্ভর করে না। এটি প্রকৃতির তিনটি চরম শক্তির সম্মিলিত আক্রমণ— বাতাসের শক্তি, সমুদ্রের ঢেউয়ের চাপ (স্টর্ম সার্জ) এবং অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত। যখন এই তিন শক্তি একসঙ্গে কোনো স্থানে আঘাত হানে, তখন বড় বড় অট্টালিকাও বালির প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়ে— কোনো কাঠামোই বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না।
১১৯ কিমি/ঘণ্টা থেকে শুরু করে ২৫২ কিমি/ঘণ্টার বেশি গতি পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিটি ক্যাটাগরিই ভিন্ন মাত্রার ধ্বংস বহন করে আনে। এদের মধ্যে প্রকৃতির তিনটি সবচেয়ে মারাত্মক শক্তি— তাপ, চাপ এবং বাতাসের সম্মিলিত বিস্ফোরণ ঘটে, যা সামান্য সামুদ্রিক আলোড়নকে কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংসের বিশাল সুরঙ্গে পরিণত করে।