রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও) হিসাবে কাজ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, দেশের স্বার্থে প্রাথমিক শিক্ষকদের এই কাজ করতেই হবে এবং এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। এই রায় শিক্ষক সমাজের একাংশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
এর আগে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল যে, সোম থেকে শনিবার স্কুলের পড়ানোর কাজের পাশাপাশি বিএলও-এর দায়িত্ব পালন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁদের যুক্তি ছিল, একমাত্র রবিবার ছুটি থাকে এবং সেই দিনটিতে ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ চাপিয়ে দেওয়া হলে তাঁদের বিশ্রামের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
তবে, হাইকোর্ট শিক্ষকদের এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি সিনহা মন্তব্য করেছেন, “কর্মক্ষেত্রের কাজ শেষ করে অতিরিক্ত সময়ে ভোট সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিএলও-দের ঠিক কী কী কাজ করতে হবে এবং কতটা সময় দিতে হবে, তা এখনও নির্দিষ্টভাবে জানায়নি নির্বাচন কমিশন। তাহলে শিক্ষকরা কেন ধরে নিচ্ছেন তাঁদের পূর্ণ সময় কাজ করানো হবে?” আদালত জানিয়েছে যে, কমিশন প্রয়োজনে সময় ও কাজের পরিসীমা নির্ধারণ করবে, তবে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের মূল দায়িত্ব শেষ করে অতিরিক্ত সময়ে এই কাজ করতে বাধ্য।
আদালত এও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভোট সংক্রান্ত দায়িত্ব সরকারি কর্মীদের চাকরির শর্তের মধ্যেই পড়ে। অতীতে কেরল হাইকোর্টে হওয়া একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে একই ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও এই রায় নির্বাচন কমিশনের জন্য এক স্বস্তির খবর, তবে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশ মনে করছে যে, এই রায় শিক্ষক সমাজের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। তাদের মতে, “শিক্ষকতা এমনিতেই পূর্ণ সময়ের কাজ। তার সঙ্গে বাড়তি দায়িত্ব চাপানো হলে ছাত্রদের শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) সম্পন্ন হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে এসআইআর-এর কাজ শুরু হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও), বিএলও সুপারভাইজার, বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ) নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে। এই আবহেই বিএলও নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ এলো। এই নির্দেশ কার্যকর হলে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি বড় অংশকে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে যুক্ত হতে হবে।