জীবন বাঁচানোর জন্য নিয়মিত রক্ত নিতে হতো শিশুদের। কিন্তু সেই রক্তই কাল হলো তাদের। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পাঁচ শিশুর শরীরে এইচআইভি (HIV) সংক্রামিত রক্ত দেওয়ার মতো হাড়হিম করা অভিযোগ উঠল মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যেই এক চিকিৎসকসহ তিন স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্য সরকার।
তদন্তে উঠে এল ভয়াবহ গাফিলতি
গত এপ্রিল মাসে সাতনা জেলা হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করার সময় ধরা পড়ে যে, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পাঁচটি শিশু এইচআইভি পজিটিভ। ঘটনাটি জানাজানি হতেই মধ্যপ্রদেশ সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আধিকারিক যোগেশ ভারসাতের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে স্ক্রিনিং না করা বা ত্রুটিপূর্ণ রক্ত ওই শিশুদের দেওয়া হয়েছিল।
প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ
তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে:
-
সাসপেন্ড: সাতনা জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক ইন-চার্জ ডাঃ দেবেন্দ্র প্যাটেলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
-
টেকনিশিয়ানদের শাস্তি: কর্তব্যে গাফিলতির জন্য দুজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
-
শোকজ: হাসপাতালের প্রাক্তন সিভিল সার্জেনকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সরকার বনাম বিরোধী সংঘাত
মধ্যপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্লা জানিয়েছেন, “কাদের রক্ত ওই শিশুদের দেওয়া হয়েছিল তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আক্রান্ত শিশুদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। কংগ্রেস নেতা বিক্রান্ত ভুরিয়া কড়া আক্রমণ করে বলেন, “এটি শুধুমাত্র অবহেলা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত অপরাধ। মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।”
আতঙ্কে অভিভাবকরা
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। সাতনা জেলা হাসপাতালের এই ভয়ংকর গাফিলতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার শত শত অভিভাবক। সরকারি হাসপাতালের সুরক্ষা এবং রক্তের বিশুদ্ধতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল এই ঘটনায়।