মায়ানমারের গদিতে কি লন্ডনের নজর? রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূতের এক মন্তব্যে তোলপাড় আন্তর্জাতিক রাজনীতি!

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর প্রশাসনিক পতনে ধুঁকছে মায়ানমার। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে সেনাশাসনের দখল নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে চলছে চরম অরাজকতা। কিন্তু সম্প্রতি এই সংকটে ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে—একসময়ের ঔপনিবেশিক শাসক কি তবে ফের মায়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে?

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজের একটি মন্তব্য এই জল্পনার আগুনে ঘি ঢেলেছে। তিনি জানিয়েছেন, মায়ানমার ইস্যুতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থানে রয়েছে ব্রিটেন। প্রশ্ন উঠছে, ব্রিটেন কি সত্যিই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই লড়ছে, নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের কৌশল নিচ্ছে?

মায়ানমারের পরিস্থিতি ও ‘প্রতারণামূলক’ নির্বাচন: আগামী ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সামরিক জান্তা। তবে আন্তর্জাতিক মহলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে।

ভোটের বাস্তব চিত্র: দেশের ৩৩০টি শহরের মধ্যে মাত্র ১৪৫টিতে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে।

বর্জন ও নিষেধাজ্ঞা: রোহিঙ্গা মুসলিমসহ লক্ষাধিক নাগরিককে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৪০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল।

অস্থিরতা: অর্ধেকের বেশি এলাকায় কোনো ভোট নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

ব্রিটেন সাফ জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মায়ানমারে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের সরকার ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি অস্ত্র ও বিমান জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে।

মানবিক বিপর্যয় ও পরিসংখ্যান: রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মায়ানমারের অবস্থা ভয়াবহ:

৩৬ লাখের বেশি মানুষ ঘরছাড়া।

২ কোটি ১৯ লাখ মানুষ জরুরি মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬,০০০-এর বেশি মানুষ।

ব্রিটেন চলতি অর্থবর্ষে ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সেনাশাসনের কড়াকড়িতে সেই ত্রাণ পৌঁছানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। মায়ানমারের ভবিষ্যৎ যখন অন্ধকারে ঢাকা, তখন ব্রিটেনের এই ‘নেতৃত্বদায়ক’ ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy