মাদ্রাসা ও স্কুলের কোথায় পার্থক্য? কী শেখানো হয় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ইসলামিক কেন্দ্রে?

উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলায় অবস্থিত দারুল উলুম দেওবন্দ হলো বিশ্বের অন্যতম প্রখ্যাত ও প্রভাবশালী ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসা মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল। আজও এটি ইসলামী শিক্ষার এক প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

দেওবন্দের শিক্ষা কাঠামোকে তিনটি প্রধান স্তরে ভাগ করা যায়:

 

১. প্রাথমিক স্তর: কোরান ও ভাষা শিক্ষা (মুতাওয়াসসিতা)

 

শিক্ষার শুরু হয় কোরান তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করা দিয়ে। এই স্তরে শিশুদের ‘নাজিরা’ শেখানো হয়, অর্থাৎ কোরান সঠিক উচ্চারণে পড়া ও মুখস্থ করা। পাশাপাশি, মৌলিক আরবি, ফারসি এবং উর্দু ভাষা শেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা নামাজ, রোজা, জাকাত, ইসলামি ইতিহাস এবং নৈতিক আচরণের মতো ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোও শিখে।

 

২. মধ্যবর্তী স্তর: আরবি, হাদিস ও ফিকহ

 

এই স্তরে শিক্ষার্থীরা আরবি ব্যাকরণ (নাহও ও সরফ), কুরআনের ব্যাখ্যা (তাফসির), হাদিস এবং ফিকহ (ইসলামী আইন)-এর গভীর অধ্যয়ন শুরু করে। এছাড়া যুক্তি (মানতিক), দর্শন (ফালসাফা) এবং উসুল-উল-ফিকহ শেখানো হয়, যা শিক্ষার্থীদের ইসলামী গ্রন্থগুলো বিশ্লেষণাত্মকভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

 

৩. উচ্চতর স্তর: বিশেষায়িত কোর্স ও গবেষণা (‘তাখাসসুস’)

 

উচ্চতর স্তরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ‘তাখাসসুস’ বা বিশেষায়িত কোর্স বেছে নিতে পারে। প্রধান কোর্সগুলো হলো:

  • তাখাসসুস ফিল হাদিস: প্রধান হাদিস গ্রন্থগুলির গভীর ও বিস্তৃত অধ্যয়ন।
  • তাকমীল ইফতা: ইসলামি আইন ও ফতোয়া লেখায় দক্ষতা অর্জন, যা সম্পন্ন করলে শিক্ষার্থীরা ‘মুফতি’ হয়ে ধর্মীয় বিধান (ফতোয়া) প্রদান করার যোগ্যতা লাভ করে।
  • তাখাসসুস ফিল আদাব: আরবি ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা।
  • তাকমীল তাফসির: কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

এই কোর্স শেষ হলে শিক্ষার্থীরা ‘আলিম’ (ইসলামিক পণ্ডিত) উপাধি অর্জন করে।

 

দাওরা-ই-হাদিস শরিফ: সর্বোচ্চ সম্মান

 

দেওবন্দের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোর্স হলো ‘দাওরা-ই-হাদীস শরিফ’। এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা ইসলামের ছটি প্রধান হাদিস গ্রন্থ—সহিহ বুখারি, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ি এবং ইবনে মাজাহ—সম্পূর্ণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করে। এই কোর্স শেষ করলে শিক্ষার্থীরা ‘আলিম’ ডিগ্রি অর্জন করে, যা ইসলামি জগতে সর্বোচ্চ সম্মানজনক।

 

আধুনিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি

 

দেওবন্দ যদিও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করে, তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু আধুনিক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে সাংবাদিকতা, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইংরেজি ভাষা এবং তুলনামূলক ধর্মের মতো কোর্সও শেখানো হয়। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাদানে সক্ষম করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সও দেওয়া হয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy