ভোটার তালিকার বিশেষ সংক্ষিপ্ত সংশোধনের (Special Summary Revision- SIR) কাজ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যখন প্রবল চাপ ও বিতর্কের ঝড় বইছে, তখন এক ভিন্ন চিত্র দেখালেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির এক বুথ লেভেল অফিসার (BLO)। প্রিয়গড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বৃষকেতু কুইরি মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর আওতাধীন এলাকার সমস্ত SIR প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক নজির স্থাপন করেছেন।
SIR প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করার বিপুল মানসিক চাপে রাজ্যে একের পর এক BLO-এর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও BLO-দের মৃত্যুর জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনের SIR প্রক্রিয়াকেই দায়ী করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, বাঘমুন্ডি ব্লকের গাগী গ্রামের বাসিন্দা বৃষকেতু কুইরি দেখালেন, সঠিক পরিকল্পনা ও দ্রুততার মাধ্যমে কীভাবে এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়।
শুরু থেকেই দ্রুত কাজ, এড়ালেন সার্ভার জ্যাম
বাঘমুন্ডি ব্লকের প্রিয়গড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক ৭৭০ জন ভোটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। বৃষকেতু জানিয়েছেন, ৪ তারিখ থেকে ফর্ম বিতরণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কাজ শুরু করে দেন।
তিনি বলেন, “৪ তারিখ থেকে যখন ফর্ম দেওয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমি দ্রুত ফর্ম দিতে শুরু করেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গেই ভোটারদের ফর্ম ফিলআপ করতে সাহায্যও করেছি, যাতে কোনো ভুল না হয়।”
বৃষকেতুর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল দ্রুততার সঙ্গে ডিজিটাইজেশন এবং আপলোড প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। তিনি জানান, সার্ভারে জটিলতা আসার আগেই তিনি কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন।
“আমি যে সমস্ত ফর্ম পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাইজেশন করে দিয়েছি। আমার ১৪ দিনে ৯০% কাজ হয়েছিল। ১৫ দিনে সম্পূর্ণ ১০০ ভাগই করে দিয়েছি। সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন সহ আমার ১৮ নভেম্বরেই কাজ শেষ হয়েছে,” বলেন তিনি।
রাত জেগে ডিউটি, সঙ্গে স্কুলের দায়িত্বও
বৃষকেতু কুইরি অকপটে স্বীকার করেছেন, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে তাঁকে সীমাহীন পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি রাত ১২টা, ১টা, কখনও কখনও রাত ৩টে পর্যন্তও SIR-এর কাজ করেছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ১৫ দিনের মধ্যে SIR-এর কাজ শেষ করার পাশাপাশি তিনি তাঁর স্কুলের শিক্ষকতার ডিউটিও স্বাভাবিকভাবে পালন করেছেন।
এই প্রসঙ্গে বাঘমুন্ডি ব্লকের ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার (BDO) আর্য, বৃষকেতুর দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “BLO-র দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দ্রুত কাজ করেছে বৃষকেতু। ও যা দাবি করছে সব সত্যি। ৭৭০ জনের ফর্ম দেওয়া, ফর্ম সংগ্রহ এবং তা পোর্টালে আপলোড দেওয়ার কাজ ও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করেছে।”
বৃষকেতুর এই ঘটনা একদিকে যেমন চরম চাপের মধ্যে থাকা অন্যান্য BLO-দের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা, তেমনই অন্যদিকে এই কঠিন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলির মাঝে একটি সাফল্যের দৃষ্টান্ত তৈরি করল।