মহিলাদের অসম্মান! দিল্লিতে বসেই তালিবান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির চরম বিতর্ক, কী বললেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গান্ধী?

আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী তথা তালিবান নেতা আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর কূটনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত শুক্রবার আফগান দূতাবাসে আয়োজিত তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পরই ঘটনাটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দূতাবাসের কর্মীদের কড়া আপত্তি সত্ত্বেও তালিবান প্রতিনিধিদলের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দূতাবাস চত্বর যে কূটনৈতিক ছাড় পায়, সেই সুযোগ নিয়েই তালিবান প্রতিনিধিদল মহিলাদের সাংবাদিক বৈঠক থেকে বাইরে রাখতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় দেশের বিরোধী নেতা, সাংবাদিক সংগঠন এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) নিজেদের এই বিতর্কের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে।

তালিবানের ‘সাংস্কৃতিক প্রোটোকল’:

মুত্তাকির ভারত সফরের তৃতীয় দিনে এই ঘটনা ঘটে। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরই মুত্তাকি আফগান দূতাবাসে সাংবাদিক বৈঠক করেন। এটি ছিল তালিবানের কোনো বিদেশমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর। তবে, এই বৈঠকে শুধুমাত্র পুরুষ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তালিবান প্রতিনিধিদল দাবি করে যে, মহিলাদের বাইরে রাখা তাদের ‘সাংস্কৃতিক প্রোটোকলের’ অংশ। কিন্তু এই ঘটনা আফগানিস্তানে মহিলাদের ওপর আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের কথা আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।

দূতাবাসের কর্মীরাও এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন কর্মী জানান, “আমরা আফগানিস্তানে তাদের আচরণ সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানি… আমাদের আত্মীয়-পরিজনরা গত চার বছর ধরে কষ্ট পাচ্ছেন। আজ তারা আফগানিস্তানের নাম ডুবিয়ে দিল।”

সরকারের উপর চরম চাপ:

বিদেশ মন্ত্রক দাবি করেছে যে, তাদের এই সাংবাদিক বৈঠকে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আফগান পক্ষকে মহিলা সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমন্ত্রণটি মুম্বইয়ের আফগান কনসাল জেনারেল পাঠিয়েছিলেন।

তবে এই ঘটনায় সরকারের উপর আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ করার অনুমতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক ভারতীয় মহিলাকে বোঝাচ্ছেন যে, তিনি এতটাই দুর্বল যে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না।” প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রও এই ঘটনায় কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। সাংবাদিক সংগঠনগুলিও এই বৈষম্যমূলক আচরণের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দেববন্দ মাদ্রাসাতেও বিতর্ক:

বিতর্ক মুত্তাকির পিছু ছাড়েনি। শনিবার উত্তরপ্রদেশের দেববন্দের দারুল উলুম মাদ্রাসায় তাঁর নির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠক আচমকা বাতিল করা হয়। এক নারী ফটোসাংবাদিককে সেখানে দেখে একজন মৌলভি প্রশ্ন করেন, “আপনি এখানে কী করে এলেন?” এর পরপরই মুত্তাকির দল বৈঠক বাতিলের ঘোষণা করে।

যদিও মুত্তাকি পরে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর ভাষণ যথেষ্ট ছিল এবং তাড়াতাড়ি দিল্লি ফিরতে হবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাগুলি ভারতে তালিবানের সীমিত প্রভাব এবং নারী অধিকার নিয়ে তাদের আপসহীন মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy