পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাক্যুদ্ধের পারদ চড়ছে। আসন্ন একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করে প্রশ্ন তুলেছেন, “দিল্লির লোকেরা কী ভেবেছেন, যা ইচ্ছে তাই করবেন?” অন্যদিকে, রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম পাকিস্তান’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন।
মমতার আগ্রাসী বার্তা: ‘বাংলা দখলে, এবার দিল্লি দখলের পথে’
বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক বিশাল মিছিলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “এই যে দিল্লিতে, বিহারে, মহারাষ্ট্রে, ওড়িশায় বাঙালিদের হেনস্থা চলছে, এর বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।” তিনি রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “রাজ্যের বহু জায়গায় প্লাবন, সবাই বন্যা কবলিত। বন্যা কবলিতদের পাশে সবাই থাকবেন। রোদে পুড়ে, জলে ভেজা তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যাস আছে। মানুষ বিপদে পড়লে আমরা এসব করি।”
রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে মমতা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, “বাংলা দখল করে, এবার দিল্লি দখলের পথে পা বাড়াবে তৃণমূল।” এই মন্তব্য আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বৃহত্তর ভূমিকা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরও বলেন, “বিকেল ৪টে পর্যন্ত জেলায় জেলায় মিছিল করবে তৃণমূল।” এর মাধ্যমে তিনি দলের নিচুতলার কর্মীদের সক্রিয় থাকার বার্তা দেন।
শমীকের ‘পশ্চিম পাকিস্তান’ হুঁশিয়ারি: সাংস্কৃতিক আক্রমণ ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ
অন্যদিকে, এই একই দিনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “আজ এ রাজ্য থেকে পুঁজি ভিন্ন রাজ্যে সরে যাচ্ছে।” এরপর তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা তুলে ধরে বলেন, “একজন সাংবাদিক শ্যামল দত্ত..বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, এখনও পর্যন্ত তিনি জেলে আছেন। মুক্ত হতে পারেননি। যাঁরা এখানে গান কবিতার কথা বলছেন, বাংলা-বাঙালির কথা বলছেন, আমাদের প্রাণের কবি, আমাদের রোম্যান্সের কবি জীবনানন্দ দাশ…সেই জীবনানন্দ দাশের কবিতা বলতে বলতে একজন জেলে চলে গেলেন। ‘আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে…’। বলছিলেন ইসকনের এক সন্ন্যাসী। তিনি এখন জেলে। যিনি তাঁকে খাবার-ওষুধ দিতে যেতেন, তিনিও এখন জেলে।”
শমীকের সংযোজন, “সিটি অফ আলেকজান্দ্রিয়ার সবথেকে বড় লাইব্রেরি যে মৌলবাদীরা ধ্বংস করেছিল, যারা নালন্দা-তক্ষশীলা-বিক্রমশীলাকে ধ্বংস করেছে, বই জ্বালিয়েছে, আজ তারাই আবার একইভাবে ইন্দিরা গান্ধীর লাইব্রেরির ৭০ হাজার বই বাংলাদেশে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই মানসিকতার মানুষ কিন্তু মুর্শিদাবাদে বাড়িতে ঢুকে হিন্দু ছেলে-মেয়েদের উপর আক্রমণ করে তাদের বইতে আগুন ধরাচ্ছে, আজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে বাঙালিকে। নাহলে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে যাবে।”
শমীকের এই মন্তব্য সরাসরি ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয় এবং পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাঁর বক্তব্য রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক মেরুকরণের এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেতাদের এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।