মণিপুর থেকে ট্রাকভর্তি গাঁজা যাচ্ছে সারা দেশে, পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে উত্তরবঙ্গ

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে গাঁজা পাচারের এক বড় চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ট্রাক এবং লরিচালকদের একটি শক্তিশালী চক্র এই অবৈধ মাদক পাচারের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরামে পণ্য পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে মণিপুর থেকে গাঁজা বোঝাই করে নেয়। অনেক সময় আসাম, মিজোরাম, এবং নাগাল্যান্ড থেকেও এই মাদক সংগ্রহ করা হয়। ১০ থেকে ২০ কেজি থেকে শুরু করে হাজার কেজি পর্যন্ত গাঁজা এভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাচার হচ্ছে।

এই পাচার চক্রের মূল ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের মাটি। গত তিন মাসে স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিযানে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (NCB) শিলিগুড়ি জোনাল ইউনিট রাজগঞ্জের ফাটাপুকুর এলাকায় উত্তরপ্রদেশ নম্বরের একটি ট্রাক আটক করে। সেই ট্রাকে গোপন চেম্বার বানিয়ে প্রায় ৯০০ কেজি গাঁজা পাচার হচ্ছিল। ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালক ও খালাসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর দেড় মাস আগে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ ফুলবাড়ি থেকে একটি মহারাষ্ট্র নম্বরের ট্রাক আটক করে প্রায় ৭০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছিল।

শিলিগুড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী রতন বণিক বলেন, “হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রসহ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ট্রাকচালকদের একটি বড় অংশ এই চক্রে জড়িত। তারা উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে ফেরার পথে এই অবৈধ কারবারে যুক্ত হচ্ছে।” জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খন্ডওয়ালে উমেশ গণপত জানান, “এই ধরনের খবর পেয়ে জেলা পুলিশ ও স্থানীয় থানাগুলো নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রে সাফল্যও পাচ্ছে।” একজন সিনিয়র আইপিএস অফিসার বলেছেন, গত তিন মাসে উত্তরবঙ্গে ভিনরাজ্যের ট্রাক ব্যবহার করে ১০-১২টি পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে।

মণিপুরের গাঁজার সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উখরুল, চান্দেল, এবং চুড়াচাঁদপুরের মতো পাহাড়ি অঞ্চলে এই গাঁজার অবৈধ চাষ হয়। স্থানীয় বাজারে এই গাঁজা প্রতি কেজি ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তা প্রতি কেজি ২০ হাজার থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। সম্প্রতি চেন্নাই বিমানবন্দরে ২৩ কেজি গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ জানতে পারে, মণিপুর থেকে ৫০ হাজার টাকা প্রতি কেজিতে কেনা সেই গাঁজা চেন্নাইতে ৭ লক্ষ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রির জন্য গ্রাহক ধরা হয়েছিল। এই বিপুল লাভের আশায় অনেকেই ট্রাক চালানোর আড়ালে গাঁজা পাচারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy