ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর: সম্পূর্ণ সূচি ও কৌশলগত ফলাফল (৪-৫ ডিসেম্বর, ২০২৫)

আপনার দেওয়া তথ্য অনুসারে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর এবং এর কৌশলগত ফলাফলগুলির একটি সম্পূর্ণ ও সমন্বিত সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো। বিশেষত, ভারত ও রাশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা রুশ অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন।


ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর: সম্পূর্ণ সূচি ও কৌশলগত ফলাফল (৪-৫ ডিসেম্বর, ২০২৫)

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে অবতরণ করবেন। ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম ভারত সফর এবং এটি ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন

🗓️ সফরের গুরুত্বপূর্ণ সূচি (৫ ডিসেম্বর, ২০২৫)

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হবে ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫-এ:

সময় (আনুমানিক) অনুষ্ঠান স্থান
সকাল ১১:০০টা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক ও আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা। রাষ্ট্রপতি ভবন, নয়াদিল্লি
সকাল ১১:৩০টা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন। রাজঘাট
দুপুর ২:০০টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া সরকারি মধ্যাহ্নভোজ। হায়দরাবাদ হাউস
বিকেল প্রতিনিধি-স্তরের আলোচনা ও শীর্ষ সম্মেলন। হায়দরাবাদ হাউস

এছাড়াও, ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন, লোক কল্যাণ মার্গে পুতিনের জন্য একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের আয়োজন করা হবে, যা দুই নেতার শক্তিশালী ব্যক্তিগত সম্পর্ককে তুলে ধরবে।


🎯 শীর্ষ সম্মেলনের সম্ভাব্য চুক্তি ও কৌশলগত ফলাফল

এই শীর্ষ সম্মেলনে ভারত ও রাশিয়া প্রায় ১০টি আন্তঃসরকারি এবং ১৫টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল আলোচনার ক্ষেত্রগুলি হলো:

১. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: S-500 মিসাইল চুক্তি এবং প্রযুক্তি ভাগাভাগি 🛡️

আলোচনায় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সহযোগিতা প্রাধান্য পাবে। বর্তমান সরঞ্জাম চুক্তি, আপগ্রেড, এবং রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির পাশাপাশি একটি “বিগ-টিকিট” চুক্তি এজেন্ডায় রয়েছে:

  • S-500 প্রোমেথিউস (Prometheus): উভয় পক্ষেই পরবর্তী প্রজন্মের S-500 মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত এই ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

  • S-500-এর বিশেষত্ব: এটি হাইপারসোনিক হুমকি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সুরক্ষা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি S-400-এর চেয়ে উন্নত এবং প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পাল্লায় এবং ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এটির প্রতিক্রিয়া সময় (Response Time) S-400-এর (১০ সেকেন্ড) চেয়ে দ্রুত, মাত্র ৩-৪ সেকেন্ড

  • অন্যান্য বিষয়: S-400 সিস্টেমের অবশিষ্ট স্কোয়াড্রনগুলির সময়মতো সরবরাহ এবং সামরিক সরঞ্জামগুলির জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ নিশ্চিত করার ওপর ভারত জোর দেবে।

২. বাণিজ্য, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ⛽

জ্বালানি বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান চালিকা শক্তি। রাশিয়া এখন ভারতের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী।

  • ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা: রুশ অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে (USD 100 billion) নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবে।

    • বর্তমানে বার্ষিক বাণিজ্য $৬৩ বিলিয়ন-এর বেশি, যা মূলত রাশিয়ার তেল রপ্তানির কারণে।

    • বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারত ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি পণ্য, পোশাক ও প্রকৌশল সামগ্রী-এর মতো পণ্যগুলিতে রাশিয়ার বাজারে নিজেদের রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

  • অর্থ প্রদান ব্যবস্থা: পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে স্থানীয় মুদ্রা বা বিকল্প পদ্ধতিতে অর্থ প্রদানের একটি স্থিতিশীল কাঠামো তৈরি নিয়ে আলোচনা হবে।

  • শক্তি নিরাপত্তা: দীর্ঘমেয়াদী তেল সরবরাহ এবং মূল্য নির্ধারণের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।

৩. পারমাণবিক প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক কূটনীতি 🌐

  • পারমাণবিক সহযোগিতা: কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের বাইরে ছোট মডুলার চুল্লি (SMRs) প্রযুক্তি সহ বেসামরিক পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

  • শ্রম গতিশীলতা চুক্তি: একটি শ্রম গতিশীলতা চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

  • ভূ-রাজনৈতিক সংলাপ: ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করবে এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলায় কৌশলগত সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy